পুজো মণ্ডপে ফুটে উঠেছে জঙ্গলমহলের হাতিদের ইতিকথা! হাতি এবং মানুষ — দু’পক্ষই যে বিপদের মুখে রয়েছে, তা তুলে ধরা হয়েছে থিমের মাধ্যমে। ঝাড়গ্রাম থানার পায়রাচালি এলাকার পিন্ডরা মোড় সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটির থিম এ বার ‘দলমা হিল’। মণ্ডপে দেখা যাচ্ছে, ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দলমা পাহাড় থেকে নেমে আসা হাতির জীবনযাত্রার চালচিত্র।খনিজ উত্তোলনের জন্য দলমা পাহাড়ের ক্ষতি এবং জঙ্গল কেটে ফেলার ফলে নিজেদের বাসস্থান হারিয়ে সংকটে হাতিরা। দেখা দিয়েছে খাদ্যাভাবও। ফলে বুনো হাতির দল দলমা ছেড়ে জঙ্গলমহলের সমতলে ঢুকে পড়ছে। কখনও রেললাইন পারাপার করতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ছে হাতি। আবার জমির ফসল বাঁচাতে দেওয়া হচ্ছে বিদ্যুতের বেড়া। তাতেও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হচ্ছে হাতিরা। কখনও আবার সুবর্ণরেখা পারাপারের সময়ে জলে ডুবে মৃত্যু হচ্ছে শাবকের। ফলে সমতলে নেমেও হাতিদের বেঁচে থাকাই চ্যালেঞ্জের মুখে।
অন্য দিকে, হাতিদের সঙ্গে সংঘাতে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জঙ্গল সংলগ্ন এলাকার মানুষের জীবন। হাতির হানায় প্রায় দিনই নিরীহ গ্রামবাসীর মৃত্যু হচ্ছে। কখনও হাতি তাঁদের জমির ফসল নষ্ট করছে, আবার কখনও ভেঙে দিচ্ছে মাটির বাড়ি। এ সমস্ত চিত্রই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পুজো মণ্ডপে।
বাদ নেই জঙ্গলমহলের শান্ত প্রকৃতির বুনো হাতি রামলালও। রাস্তায় চলন্ত গাড়ি দাঁড় করিয়ে খাবারের জন্য ‘তোলাবাজি’ করছে রামলাল, সে দৃশ্যও ফুটে উঠেছে এখানে। হাতি মানুষের সহাবস্থান নয়, এখন অস্তিত্বের সংকটে দাঁড়িয়ে তারা। সে ছবিও তুলে ধরা হয়েছে মণ্ডপে। এই পুজোকে কেন্দ্র করে রয়েছে জঙ্গল লাগোয়া দশটি গ্রামের মানুষজনের জীবনযাত্রা। ‘দলমা হিল’ থিমের ভাবনায় পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য বিশ্বরূপ মল্লদেব।
শিল্পী সীমন্ত সিংহের হাতের কাজে মণ্ডপে রূপ দেওয়া হয়েছে। পুজোর উদ্যোক্তারা বলেন, ‘পুজো শুধুমাত্র আনন্দ নয়, তার পাশাপাশি তাঁদের সমস্যার কথাও মানুষের কাছে তুলে ধরা এবং রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার হাতির সমস্যা সমাধানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করুক, এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’
পুজো কমিটির সভাপতি প্রবীর শ্যামল বলেন, ‘আমাদের গ্রামগুলি চারিদিক জঙ্গলে ঘেরা। প্রতিনিয়ত লোকালয়ে বুনো হাতি খাবারের সন্ধানে দিনে-রাতে ঢুকে পড়ছে। যার ফলে নানা ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এমনকী, হাতিও মারা যাচ্ছে। মানুষ ও হাতি উভয়ই সমস্যায় রয়েছে। দলমা পাহাড়ে হাতিদের বসবাসের অযোগ্য হয়ে ওঠায় এই সমস্যার সম্মুখীন সকলে আমরা। মানুষের জীবনযাত্রাতেও তার প্রভাব পড়ছে। সে কথাই তুলে ধরা হয়েছে মণ্ডপে।’