উৎসবমুখর কলকাতা থেকে তাঁরা রয়েছেন প্রায় ১৭৫ কিলোমিটার দূরে। সপ্তমী (১০ অক্টোবর)-র রাত কেটেছে দুশ্চিন্তায়। অষ্টমীর দিন, শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কলকাতায় ছুটে আসছেন অপূর্ব মাহাতো। চিকিৎসক-সন্তান অনিকেত মাহাতোকে বৃহস্পতিবার রাতেই অনশন মঞ্চ থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আরজি কর হাসপাতালে, যে আরজি কর হাসপাতলের ঘটনা এবং পরবর্তী দাবিদাওয়াকে কেন্দ্র করে চলছে অনশন। আরজি কর-এই আপাতত চিকিৎসাধীন অনিকেত। সংবাদমাধ্যম মারফত খবর পাওয়ার পর থেকেই মন আকুল মা তারারানি মাহাতোর। ছেলের জন্য চিন্তার কথা নির্দ্বিধায় স্বীকার করেও ততোধিক নির্দ্বিধ মায়ের বার্তা, 'ও যা ভালো বুঝেছে, তাই করেছে। ওর পাশে আছি।'ফোনে অনশনে বসার কথা বাবা-মাকে জানিয়েছিলেন অনিকেত। পেয়েছিলেন অকুণ্ঠ সমর্থনও। মেধাবী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছেলের শিরদাঁড়া বরাবর সোজা, জানান বাবা অপূর্ব মাহাতো। তিনি জানান, এক বার অনিকেতের স্কুলে অঙ্কের খাতায় ভুল করে ৯৮-এর জায়গায় ৩৪ পড়ে গিয়েছিল। ছেলে সটান হাজির হয়েছিল প্রধান শিক্ষকের ঘরে। ছেলের এই প্রতিবাদী সত্ত্বাকে সযত্নে প্রশয় দিয়ে এসেছেন বাবা ও মা।
ছেলে যা করছে, তাতে আমাদের সমর্থন রয়েছেঅপূর্ব কুমার মাহাতো
ছোট থেকেই মেধাবী ঝাড়গ্রাম জেলার শিলদার বাসিন্দা অনিকেত মাহাতো। ছেলেকে ডাক্তার হওয়ার জন্য উৎসাহ দিয়ে এসেছেন বাবা অপূর্ব কুমার মাহাতো। তিনি অবসরপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট। পরিবারের অপর সদস্য অনিকেতের মা তারারানি মাহাতো। ছেলে ডাক্তার হয়ে অন্যের প্রাণ বাঁচাবে, সেটাই সবথেকে বড় প্রাপ্তি বলে জানান তাঁরা।
গত রবিবার আরজি কর হাসপাতালের নির্যাতিতা তরুণীর জন্য সুবিচার-সহ ১০ দফা দাবিতে ছেলের অনশনে বসার খবর কানে গিয়েছিল তাঁদের। ছেলের জন্য চিন্তা হলেও তাঁরা পাশে থেকেছেন অনিকেতের। বৃহস্পতিবার রাতে অনিকেতের শারীরিক অবস্থার বিশেষ অবনতি হওয়ায় তাঁকে ভর্তি করা হয় আরজি করে। আপাতত আরজি করের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট বা সিসিইউতে চিকিৎসা চলছে অনিকেতের। 'সংকটজনক' অনিকেতের চিকিৎসার জন্য গড়া হয়েছে ৫ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড।
সংবাদ মাধ্যমের থেকেই সেই খবর পেয়েছিলেন অপূর্ব মাহাতো। শুক্রবার ‘এই সময় অনলাইন’-কে তিনি বলেন, ‘ছেলের শরীর খারাপ হয়েছে শুনেছি। আলাদা করে এই নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। ওর স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে চাই। তবে ছেলে যা করছে, তাতে আমাদের সমর্থন রয়েছে।’
অনিকেতের মা তারারানি মাহাতো জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় কলকাতায় আসবেন অপূর্ব মাহাতো। তিনি বলেন, ‘ছেলে অনশনে বসার কথা ফোনে জানিয়েছিল। শুনেছি ওর শরীরটা খারাপ হয়েছে। তবে ছেলে যা ভালো বুঝেছে, তাই করছে। আমাদেরও চিন্তা হয়। ওর বাবা আজ কলকাতায় যাচ্ছে।’