ফ্রিজের নিচে ঘাপটি মেরে গোখরো! জন্মদিনের আগের রাতে প্রাণ গেল ৩ বছরের শিশুর
প্রতিদিন | ১২ অক্টোবর ২০২৪
শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: রাতটা পেরলেই জন্মদিন। এবছর চার হওয়ার কথা ছিল ছোট্ট পায়েলের। তার জন্য বাবা কিনে এনেছিলেন একগাদা পুতুল, খেলনা। কিন্তু নিয়তির কী নিঠুর পরিহাস! ঠিক আগের দিনই মেয়ের প্রাণ কেড়ে নিল বিষাক্ত গোখরো। পুজোর মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরের ক্ষীরপাই এলাকার এই ঘটনায় সমস্ত আনন্দ যেন নিমেষে শেষ হয়ে গিয়েছে। শোকাহত প্রতিবেশীরাও। মেয়ের জন্য কেনা সমস্ত খেলনা, পুতুল জলে ভাসিয়ে অঝোরে কেঁদে চলেছে মা-বাবা।
দুর্গাপুজোর অষ্টমীতে মা-বাবার কোল আলো করে এসেছিল পায়েল দাস। তাই তাকে আদর করে বাড়িতে ‘অষ্টমী’ বলে ডাকা হতো। আর ফি বছর অষ্টমীতেই হতো তার জন্মদিন পালন। এবছর চারে পা দেওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু তার আগেই সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত হয়ে দুয়ারে কড়া নাড়ল একজোড়া গোখরো। বৃহস্পতিবার সন্ধেবেলা নিজের বাড়িতে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা জল বের করছিল পায়েল। তখনই বিষের ছোবল! মেয়ে বুঝতে পেরেছিল, ফ্রিজের নিচে ঘাপটি মেরে রয়েছে সাপ। সঙ্গে সঙ্গে মাকে গিয়ে সে বলে, সাপ কামড়েছে পায়ে।
একথা শুনে স্থির থাকতে পারেননি মা-বাবা। ছোট্ট মেয়েকে কোলে নিয়ে হাসপাতালের বদলে ছুটে যান ওঝার বাড়ি। পরিবার সূত্রে খবর, কিছু করতে পারেননি ওঝা। এর পর দ্বিতীয় ওঝা। তিনিও মেয়ের শরীর থেকে বিষ দূর করতে পারেননি। এতটা সময় কেটে যাওয়ার পর যখন ক্ষীরপাই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পায়েলকে নিয়ে যাওয়া হয়, চিকিৎসকরা হতাশ গলায় জানান, অনেকক্ষণ আগেই তার হৃদস্পন্দন থেমে গিয়েছে। মৃত্যু হয়েছে। জন্মদিনের প্রস্তুতি, পুজোর আনন্দ সব একনিমেষে যেন শুষে নেয় কেউ!
পরে দেখা যায়, পায়েলদের বাড়িতে ঢুকেছে একজোড়া গোখরো সাপ। বনদপ্তরকে খবর দিলে বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। কিন্তু প্রশ্ন, কীভাবে বাড়িতে ঢুকল জোড়া সাপ? ক্ষীরপাই পুরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের যে এলাকায় তাদের বাড়ি, তা কিছুটা গ্রামাঞ্চল। সদ্য বন্যাপ্লাবিত হয়েছে। তার জেরে এসব সরীসৃপের আনাগোনা রয়েছে। সেভাবেই হয়ত বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়েছিল গোখরো দুটি। আর এক ছোবলেই প্রাণ কেড়েছে ছোট্ট শিশুর।