রামকৃষ্ণদেব বলতেন, মাতৃভাব বড় শুদ্ধ ভাব। কুমারীর মধ্যে দৈবীভাবের প্রকাশ দেখা বা তাকে জননী রূপে পুজো করা সেই শুদ্ধসত্ত্ব ভাবেরই এক সার্থক প্রকাশ। তাই, দুর্গাপুজোয় কুমারী পুজোর অনুষ্ঠান তারই শাস্ত্রীয় ও বাস্তবায়িত রূপ। সেই ভাবই সকলের মধ্যে সঞ্চারিত করতে চেয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। সেই পরম্পরা বজায় রেখে শুক্রবার বেলুড় মঠে অনুষ্ঠিত হল কুমারী পুজো।
১৯০১ সালে বেলুড় মঠে প্রথম দুর্গাপুজো হয়। তাতে ন’জন কুমারীকে পুজো করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে এক জনকে স্বামী বিবেকানন্দ নিজে পুজো করেছিলেন। শুক্রবার অষ্টমীর সকালে মঠের দুর্গাপুজোয় সাড়ম্বরে আয়োজিত হয় কুমারীপুজো। এ দিন ভোরে মঙ্গলারতি দিয়ে শুরু হয়েছে অষ্টমী পুজো। তার পরে হয় পুষ্পাঞ্জলি। এর পরে ঘড়ির কাঁটায় ঠিক সকাল ৯টা বাজতেই কুমারীকে নিয়ে আসা হয় পুজো প্রাঙ্গণে। তার আগে চিরাচরিত রীতি মেনে কুমারীকে মঠের মূল মন্দিরে নিয়ে গিয়ে রামকৃষ্ণদেবকে দর্শন করানো হয়। কুমারী পুজো দেখার জন্য এ দিন ভোর থেকে অসংখ্য দর্শনার্থী মঠেভিড় করেন।
এ বছর মঠের কুমারী হয়েছে বেলুড় বাজারের বাসিন্দা শানভী মুখোপাধ্যায়। বয়স পাঁচ বছর কয়েক মাস হওয়ায় তাকে উমা রূপে পুজো করা হয়। লাল বেনারসি, গয়নায়, মকুটে সাজানো হয়েছিল কুমারীকে। পুজো শেষের হলে তাকে মঠের সন্ন্যাসী, ব্রহ্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবকেরা চেয়ারে বসানো অবস্থাতেই তুলে নিয়ে প্রথমে যান বেলুড় মঠের কার্যালয় চত্বরের পুরনো মন্দিরে। সেখানে বারান্দা থেকে ফের নীচে দাঁড়ানো দর্শনার্থীদের দেখানো হয় কুমারীকে। এর পরে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে গাড়িতে চাপিয়ে কুমারীকে বাড়ির দিকে রওনা করানো হয়।
মঠের প্রবীণ সন্ন্যাসীরা জানাচ্ছেন, রামকৃষ্ণদেব কুমারীকে বলতেন ভববতীর অংশ। তন্ত্রসারে বলা আছে, এক থেকে ষোল বছর পর্যন্ত বালিকাদের কুমারী পুজোর জন্য নির্বাচিত করা যেতে পারে। আর এই বয়সের ভাগ অনুযায়ী কুমারীদের নাম স্থির হয়। আর সেই নামে পুজো হয়। যেমন এ বছর বেলুড়ের শানভীকে পুজো করা হল উমা রূপে।