‘মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত, চিকিৎসায় ভুল হতে পারে’, এ বার ‘গণইস্তফা’ কল্যাণী জেএনএমের ৭৭ ডাক্তারের
আনন্দবাজার | ১৩ অক্টোবর ২০২৪
তাঁরা মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। কাজ করার মতো মানসিক পরিস্থিতি নেই কারও। জুনিয়র ডাক্তারদের সমর্থনে এ বার তাই ‘গণইস্তফা’ দিলেন কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালের ৭৭ জন সিনিয়র ডাক্তার। রবিবার হাসপাতালের রেজিস্ট্রারকে ইমেল করে সিদ্ধান্তের কথা তাঁরা জানিয়েছেন। ইস্তফাপত্রে ৭৭ জনের স্বাক্ষর রয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, সোমবার থেকে তাঁরা আর কাজ করবেন না।
ইস্তফাপত্রে ডাক্তারেরা লিখেছেন, ‘‘৯ অগস্ট আরজি করে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রতিবাদে বিচার চেয়ে এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ১০ দফা দাবিতে জুনিয়র ডাক্তারেরা আমরণ অনশনে বসেছেন। তাঁদের দাবিগুলি সাধারণ মানুষের উপকারের জন্যই। অনশনরত জুনিয়রদের শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে ক্রমশ। ওঁদের এই ভোগান্তি, এই যন্ত্রণা আমরা সহ্য করতে পারছি না। এই পরিস্থিতিতে কাজ করার মতো মানসিক অবস্থাই নেই আমাদের কারও। জোর করে কাজ করলে আমাদের কাজে ভুল হতে পারে। সে ক্ষেত্রে রোগীদের জীবনসঙ্কট তৈরি হতে পারে। তাই আমরা ‘গণইস্তফা’র সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যা সোমবার থেকে কার্যকর হবে।’’
এর আগে আরজি কর, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ-সহ একাধিক হাসপাতালের সিনিয়র ডাক্তারেরা ‘গণইস্তফা’ দিয়েছেন। জুনিয়র ডাক্তারদের আমরণ অনশনের প্রতি সংহতি জানিয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। আন্দোলনের সমর্থনে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে। জরুরি পরিষেবা ছাড়া অন্যান্য রোগী পরিষেবা বন্ধ থাকবে ওই সমস্ত হাসপাতালে। কোথাও কোথাও জুনিয়রদের সমর্থনে সিনিয়র ডাক্তারেরা প্রতীকী অনশনও চালু করেছেন। ধর্মতলায় প্রতি দিন ১২ ঘণ্টার প্রতীকী অনশন করছেন কয়েক জন সিনিয়র ডাক্তার। এই পরিস্থিতিতে ডাক্তারদের ‘গণইস্তফা’ নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করেছে রাজ্য সরকারও। শনিবার মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘গণইস্তফা’ আদৌ পদত্যাগ হিসাবে গ্রাহ্য নয়। ব্যক্তিগত ভাবে পদত্যাগ করলে তবেই তা গৃহীত হতে পারে।
কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালের সিনিয়র ডাক্তার কৌস্তভ চক্রবর্তী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘রাজ্য জুড়ে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে যে থ্রেট কালচার চলছে, তার অন্যতম ভয়ঙ্কর রূপ কল্যাণী জেএনএম। বেশ কয়েক জনকে অপসারণ করার পরেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। এই থ্রেট কালচারের সিন্ডিকেটের যারা মূল মাথা, রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তাদের প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। আমরা রাজ্য সরকারকে গণইস্তফার মধ্যে দিয়ে একটা বার্তা দিতে চাইছি। আলাপনবাবু যে ভাবে চ্যালেঞ্জ করেছেন, সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে আমরা এই ইস্তফা দিয়েছি। আমরা ওঁদের আশ্বস্ত করতে চাই, সরকারি হাসপাতালে চাকরি না করলেও ডাক্তারেরা না খেয়ে মরবেন না।’’
আইএমএ পশ্চিমবঙ্গ শাখার যুগ্ম সম্পাদক রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় শব্দচয়নে যে কদর্যতার পরিচয় দিয়েছেন, তা নিন্দনীয়। ওঁর কাছে এ ধরনের ভাষা আমরা আশা করি না। উনি যে পদ্ধতিগত ইস্তফার কথা বলেছেন, সে বিষয়ে উনি যদি আমাদের একটি নির্দিষ্ট প্রফর্মা তৈরি করে দেন, আমরা সেই অনুযায়ী একে একে সই করে ইস্তফা দেব।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সরকারি ক্ষেত্রে ৩৫০ জন এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে আরও ৪০০ জন ডাক্তার ইতিমধ্যেই ইস্তফা দিয়েছেন। দীর্ঘ দিনের জমে থাকা ক্ষোভ অগ্নুৎপাতের মতো বিস্ফারিত হচ্ছে। রাজ্য সরকার চিকিৎসকদের প্রতি যে অসংবেদনশীল আচরণ করছে, তার পরিবর্তন না হলে পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য সরকার তৈরি থাকুক।’’
উল্লেখ্য, আরজি কর-কাণ্ডের বিচার চেয়ে এবং হাসপাতালে নিরাপত্তার দাবিতে গত শনিবার, ৫ অক্টোবর থেকে ধর্মতলায় আমরণ অনশনে বসেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সাত জন সেই অনশন চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এখনও। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজেও দু’জন আলাদা করে অনশন শুরু করেছিলেন। ইতিমধ্যে অনশনরত তিন জন ডাক্তার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।