• বিসর্জনের ঘাটে অঘটন এড়াতে কড়া নজরদারি পুলিশের, সাফাইয়ে জোর পুরসভার
    প্রতিদিন | ১৩ অক্টোবর ২০২৪
  • স্টাফ রিপোর্টার: বিসর্জনের বাজনায় মনকেমনের পালা। কলকাতার বিশেষ কয়েকটি বারোয়ারি এখনও দশমীতে বিসর্জন দেওয়ার প্রথা মেনে আসছে। এছাড়া বনেদি বাড়ি ও আবাসনের পুজোর প্রতিমা সাধারণত দশমীতেই বিসর্জন দেওয়া হয়। তিথি অনুযায়ী শনিবার দশমী ছিল। তবে কলকাতার বেশিরভাগ বারোয়ারি পুজোর বিসর্জন হয়নি দশমীতে। তারা আজ অর্থাৎ রবিবার প্রতিমা নিরঞ্জন করবে। রবিবার থেকে ঘাটগুলিতে বিসর্জনের চাপ থাকবে। তাই এদিন আরও বেশি সংখ‌্যক পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে। ঘাট সাফাইয়ে থাকছেন বাড়তি সাফাইকর্মীও।

    এদিনও মণ্ডপে দর্শকদের ভিড় উপচে পড়ে। একদিকে যেমন কলকাতার বড় মণ্ডপগুলিতে ভিড় সামলাতে ব‌্যস্ত ছিল পুলিশ, তেমনই প্রত্যেকটি ঘাটেও ছিল পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ। জল পুলিশ ও বিপর্যয় মোকাবিলা টিম রয়েছে। বিকেলের পর থেকে বনেদি বাড়ি ও আবাসনের প্রতিমাগুলি নিরঞ্জন পর্ব শুরু হয়। লালবাজার সূত্রে খবর, রবিবার থেকে আরও বেশি সংখ‌্যক পুলিশ মোতায়েন থাকছে। জোয়ারের সময়ও অনেক পুজো কমিটির লোকজন বিসর্জন দিতে নামেন। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে। জোয়ার-ভাটার সময় মাইকিং করে প্রচার চালানো হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি ঘাটে বিপর্যয় মোকাবিলার টিম থাকছে। মাঝি ও ডুবুরি রাখা হচ্ছে।

    নিমতলা, বাজেকদমতলা, গোয়ালিয়র ঘাট ও বিচালিঘাটে চারটি বোট থাকছে যাতে জলে প্রতিমা ফেলার পর কাঠামোগুলি সরিয়ে ফেলা যায়। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে যাতে দ্রুত উদ্ধারকাজ করা যায় সেজন‌্য ডিসি কমব‌্যাটের নেতৃত্বে উদ্ধারকারী টিম থাকছে। ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ ঘাট, যেখান থেকে বেশিরভাগ প্রতিমা বিসর্জন হয়, সেখানে বসানো হয়েছে অতিরিক্ত সংখ্যক সিসিটিভি ক্যামেরা। জল পুলিশের দপ্তরে একটি রেসকিউ টিম তৈরি থাকছে। সেখানে থাকছেন পাঁচজন ডুবুরি।

    বাজে কদমতলা ঘাটে একটি বিশেষ লঞ্চে থাকছেন ৬ জন ডুবুরি। এছাড়াও বাগবাজার ঘাট, বাজে কদমতলা ঘাট, গোয়ালিয়র ঘাট ও নিমতলা ঘাটে মোতায়েন থাকছে ডিএমজির বিশেষ বাহিনী। নজরদারির জন্য সাতটি ঘাটে থাকছে ওয়াচ টাওয়ার। প্রত্যেকটি ঘাটে একজন করে ইন্সপেক্টরের আওতায় মোতায়েন থাকছে পুলিশের টিম, যার নজরদারি করবেন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার ও ডিসিরা। ঘাটগুলিতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিসর্জনের সঙ্গে সঙ্গে ঘাট সাফাইয়ের কাজে পুরসভার সঙ্গে সহযোগিতা করবে পুলিশও।

    এবার বিসর্জনের শোভাযাত্রায় নিষিদ্ধ ডিজে। কোনও পুজো কমিটি যাতে ডিজে না বাজায়, সেদিকে কড়া নজর রাখবেন কলকাতার ২৩৮টি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পিকেটে থাকা পুলিশকর্মী ও আধিকারিকরা। কেউ যদি ডিজে বাজায় অথবা সেরকম কোনও অভিযোগ পুলিশের কাছে আসে, সঙ্গে সঙ্গে সেই পুজো কমিটির বিরুদ্ধে পুলিশ আইনি ব্যবস্থা নেবে। আয়োজকদের গ্রেপ্তারিও করা হতে পারে।

    উত্তর কলকাতার বিবেকানন্দ রোড ও রবীন্দ্র সরণি, নিমতলা ঘাট স্ট্রিট, দক্ষিণ কলকাতার রাসবিহারী অ‌্যাভিনিউ, গড়িয়াহাট মোড়ের মতো জায়গাগুলিতে পিকেটের দায়িত্বে থাকবেন এসিরা। এ ছাড়া কয়েকটি পিকেটের দায়িত্বে ইন্সপেক্টর ও বাকিগুলির দায়িত্বে সাব ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার অফিসাররা থাকছেন। এদিকে, বিসর্জন পর্ব চলার জন‌্য সকাল আটটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত কলকাতায় যে কোনও মালবাহী গাড়ির যাতায়াত নিষিদ্ধ। এছাড়াও বিকেল তিনটের পর থেকে শহরের ৫৫টি রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

    নিমতলা ঘাট স্ট্রিট, বিডন স্ট্রিট, স্ট্র্যান্ড রোড, হরিশ মুখার্জি রোড, কালীঘাট রোড-সহ শহরের ১৫টি রাস্তায় বিসর্জনের সময় পার্কিং নিষিদ্ধ। শহরের বেশ কিছু রাস্তা ওয়ান ওয়ে করা হয়েছে। নিমতলা ঘাটের দিকে যে বিসর্জনের শোভাযাত্রা যাবে, তার ঢাকিদের মহর্ষি দেবেন্দ্র রোডের দিকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। নিমতলা শ্মশানের স্তব্ধতা যাতে ভঙ্গ না হয়, তার জন্যই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

    এদিন থেকে ঘাটে পুরসভার সাফাইকর্মী নিযুক্ত ছিল। সুষ্ঠুভাবে যাতে প্রতিমা নিরঞ্জন পর্ব চলে তা নিয়ে এদিন মেয়র ফিরহাদ হাকিম বৈঠক করেন বিভাগীয় আধিকারিকদের সঙ্গে। গঙ্গার দূষণ রুখতে পুজোর সামগ্রী, ফুল, পাতা জলে ফেলা যাবে না। প্রতিমা জলে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেন দিয়ে তা তুলে নেওয়া হচ্ছে। বিসর্জনের পর প্রতিমাগুলি পাড় থেকে তুলে নিয়ে যাবে পুরসভার সাফাইকর্মীরা। শহরতলির ঘাটে বিসর্জনের পর প্রতিমা জলে ভেসে এসে কলকাতায় বিপত্তি ঘটায়। বিসর্জনের আবর্জনা ভেসে এসে জলের পাইপলাইনের মুখ বন্ধ করে দেয়। তাই সেদিকেও নজর রাখতে বলা হয়েছে আধিকারিকদের।
  • Link to this news (প্রতিদিন)