বিজয়া দশমীর ভাষণে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবত আরজি কর নিয়ে বার্তা দেওয়ার পরেই সিপিএমের পথ নিল বিজেপি। বিজেপি কর্মীদের জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে শামিল হওয়ার ডাক দিলেন রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। তিনি জানিয়ে দিলেন, এই প্রতিবাদে চিকিৎসকদের পাশে রয়েছেন তাঁরা। আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হল, ‘দলীয় স্বার্থ’ দূরে রেখে কেউ আন্দোলনে শামিল হতে চাইলে অবশ্যই তা পারেন। কিন্তু কোনও পরিচিত রাজনীতিককে তাঁদের এই আন্দোলনের কাছে কোনও মতেই ঘেঁষতে দেবেন না, তা সেই রাজনীতিক যে দলেরই হোন না কেন।
রবিবার সুকান্তের সই করা একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে বিজেপি। সেই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে’ জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠনের যে আন্দোলন, তাতে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির। আরজি কর হাসপাতালের চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের আবহে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারেরা যে দাবি তুলেছেন, তা বৈধ। সেই দাবি দ্রুত পূরণ করা উচিত। বিবৃতিতে আরও দাবি করা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠকে রাজ্য সরকার দাবি পূরণের কথা জানালেও পরে তা থেকে সরে এসেছে। এর পরেই বিজেপি কর্মীদের জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে পাশে থাকার ডাক দিয়েছেন সুকান্ত।
প্রসঙ্গত, শনিবারই দশেরা উৎসবের সভায় ভাগবতের মুখে আরজি করের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। তিনি বলেন, ‘‘আরজি করের ঘটনা আমাদের সকলের কলঙ্ক। এমন ঘটনা ঘটতে দেওয়া উচিত নয়। আর ঘটলে সকলকে একসঙ্গে তার মোকাবিলা করতে হবে। কিন্তু সেখানে অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা হয়েছে।’’ কলকাতায় আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদেরও সমর্থন করেছেন আরএসএস প্রধান। তাঁর মন্তব্য, ‘‘পুরো দেশ আজ ডাক্তার ভাইদের পাশে রয়েছে।’’ এই আবহে রবিবার পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি কর্মীদের এই আন্দোলনের পাশে থাকার ডাক দিলেন সুকান্ত। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমরা প্রথম থেকেই নিজেদের দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি চিকিৎসকদের আন্দোলনকে সমর্থন করে এসেছি। এখন যা পরিস্থিতি, তাতে আরও বেশি করে সমর্থন দেওয়ার কথা মনে হল। সেই হিসাবে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।’’
বিজেপির আগে একই পথে হেঁটেছে সিপিএমও। শুক্রবার ডাক্তারদের ‘মহাসমাবেশ’কে আনুষ্ঠানিক ভাবে সমর্থন করে রাজ্য বামফ্রন্ট। রাজ্য বামফ্রন্টের তরফে বিবৃতি দিয়ে সাধারণ মানুষকে শুক্রবার বিকালে ধর্মতলায় ডাক্তারদের ডাকা সমাবেশে অংশ নিতে অনুরোধ করা হয়। কোনও রকমের সাংগঠনিক পতাকা নিয়ে যেতেও বারণ করা হয়। জানানো হয়, সাধারণ নাগরিক হিসাবেই যেন কর্মসূচিতে অংশ নেন বাম কর্মীরা। এ বার কি ভাগবতের মন্তব্যের পর সিপিএমের পথে হাঁটছে বিজেপি? সুকান্ত অবশ্য সেই সিপিএমকে ‘অনুসরণ’ করার কথা মানেননি। তিনি সিপিএমের পথ নেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বাংলায় শূন্য, দেশে এখন নিঃস্ব সিপিএম। তার থেকে বিশ্বের বৃহত্তম দল বিজেপি শিখবে, ভাবলেন কী করে?’’ এর পরেই তিনি জানিয়ে দেন তাঁদের দাবি। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ। এই আন্দোলনে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট, তা হল চিকিৎসকদের নিরাপত্তা।’’
এই প্রসঙ্গে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিস হালদার জানিয়ে দিয়েছেন, দলীয় পতাকা নিয়ে তাঁদের সমর্থন জানানো যাবে না। তাঁর কথায়, ‘‘দলীয় স্বার্থ দূরে সরিয়ে রেখে, দলের পতাকা, ব্যানার ছেড়ে একেবারে সাধারণ নাগরিক হিসাবে কেউ এখানে আসতে চাইলে, এই আন্দোলনে আমাদের পাশে দাঁড়াতে চাইলে দাঁড়াতেই পারেন। কিন্তু কোনও রাজনৈতিক দল যদি দলীয় স্বার্থ নিয়ে এই আন্দোলনের অংশ হতে চায়, তা হলে সেটা হতে দেব না।’’ তার পরেই তিনি বলেন, ‘‘একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, কোনও চেনা পরিচিত রাজনীতিক, তা তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস, যে দলেরই হোন না কেন, তাঁকে আমরা কোনও মতেই এই আন্দোলনের ধারেকাছে ঘেঁষতে দেব না।’’