নবান্ন হাই কোর্ট দেখাতেই পাল্টা বিবৃতি চিকিৎসক সংগঠনের, ‘আইন মেনেই করা হবে দ্রোহের কার্নিভাল’
আনন্দবাজার | ১৩ অক্টোবর ২০২৪
মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ মঙ্গলবার ‘দ্রোহের কার্নিভাল’ প্রত্যাহার করার কথা বলেছেন ডাক্তারদের। ওই একই দিনে কলকাতায় পুজোর কার্নিভালও রয়েছে। ফলে নিরাপত্তাজনিত কারণ উল্লেখ করে ‘দ্রোহের কার্নিভাল’ থেকে বিরত থাকার জন্য বলেছে রাজ্য সরকার। মুখ্যসচিবের সেই ইমেলের পরই এ বার বিবৃতি দিল সিনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন ‘জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টর্স’। মঙ্গলবার ‘দ্রোহের কার্নিভাল’ না করার জন্য সরকারের বার্তাকে ‘হতাশাজনক’ বলেই মনে করছে চিকিৎসক সংগঠন। মুখ্যসচিবের পাঠানো ইমেলে ১১ অক্টোবর হাই কোর্টের একটি নির্দেশের কথাও উল্লেখ ছিল। তবে চিকিৎসকেরাও জানিয়ে দিয়েছেন, আইনের সীমার মধ্যে থেকে এবং হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ মেনেই তাঁদের লড়াই জারি থাকবে।
সংগঠনের তরফে এক বিবৃতিতে যুগ্ম আহ্বায়ক চিকিৎসক পুন্যব্রত গুণ এবং চিকিৎসক হীরালাল কোনার বলেছেন, “আমরা এক বারও বলছি না সরকারের কার্নিভাল (পুজোর কার্নিভাল) বাতিল করার জন্য। উদ্যাপনের সাংবিধানিক অধিকারকে আমরা সম্মান করি। একই ভাবে আমাদেরও অধিকার রয়েছে উৎসবে বিঘ্ন না ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক উপায়ে প্রতিবাদ জানানোর। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের প্রতি সংহতিতে ১৫ অক্টোবর দ্রোহের কার্নিভাল ডাকা হয়েছে। সরকারের তা প্রত্যাহার করতে বলা আমাদের কাছে হতাশাজনক।”
আরজি করের নির্যাতিতার বিচার এবং হাসপাতালে নিরাপত্তার দাবিতে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। রাস্তায় বসে রয়েছেন তাঁরা। আমরণ অনশন কর্মসূচির রবিবার নবম দিন। ইতিমধ্যে তিন জন অনশনরত জুনিয়র ডাক্তার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কলকাতার অনশনমঞ্চের দু’জন এবং শিলিগুড়িতে এক জন জুনিয়র ডাক্তার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বিবৃতিতে এই বাস্তব পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে চিকিৎসক সংগঠন জানিয়েছে, এই পরিস্থিতিতেও রাজ্য সরকার কার্নিভাল করার সিদ্ধান্তে তারা ‘হতাশ’। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “এই কঠিন পরিস্থিতিতেও সরকার উদ্যাপনকেই গুরুত্ব দিচ্ছে।”
সোমবারই বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক ডেকেছে রাজ্য সরকার। স্বাস্থ্যভবনে ওই বৈঠকে থাকবেন মুখ্যসচিব পন্থ। পৃথক একটি ইমেলে ‘জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টর্স’-কে ‘দ্রোহের কার্নিভাল’ প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করেন পন্থ। কার্নিভালে জনসমাগম এবং আগতদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই ‘দ্রোহের কার্নিভাল’ প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছেন পন্থ। ইমেলে তিনি জানিয়েছিলেন, পুজো কার্নিভাল একটি বড় অনুষ্ঠান। হাজার হাজার মানুষ সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। বিদেশ থেকে বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি এই সাংস্কৃতি ঐতিহ্যের সাক্ষী হতে আসেন। তাই সে সময় ‘দ্রোহের কার্নিভাল’-এর মতো কর্মসূচির কারণে দুর্গাপুজোর কার্নিভালে আসা মানুষদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে।
পাশাপাশি হাই কোর্টের ১১ অক্টোবরের নির্দেশের কথাও ইমেলে উল্লেখ করেছিলেন মুখ্যসচিব। ত্রিধারাকাণ্ডে অভিযুক্তদের অন্তর্বর্তী জামিনের নির্দেশের সময়েই হাই কোর্ট জানিয়ে দিয়েছিল, রাজ্য সরকার আয়োজিত পুজোর কার্নিভালে কোনও রকম ব্যাঘাত সৃষ্টি করা যাবে না। অর্থাৎ, সেখানে যাতে বিক্ষোভ প্রদর্শন না হয়, তা আগেভাগেই জানিয়ে রেখেছে উচ্চ আদালত। সেই প্রসঙ্গ টেনে পন্থ ইমেলে লিখেছিলেন, কোনও রকম বিক্ষোভ পুজো কার্নিভালে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এ ছাড়াও হাই কোর্টের নির্দেশ অমান্য হবে।