শুভ্র চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা: কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি থেকে অবসর নেওয়া এক ব্যক্তির কাছে ফোন এসেছিল কয়েকদিন আগে। তাঁকে বলা হয় পেনশনার্স অফিস থেকে বলছি। আপনার লাইফ সার্টিফিকেট এখনও জমা পড়েনি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জমা করতে না পারলে পেনশন বন্ধ হয়ে যাবে। বছর সত্তরের ওই বৃদ্ধ জানতে চেয়েছিলেন কী করতে হবে। জালিয়াতরা পেনশনের যাবতীয় নথি চেয়ে বসেন। তাঁদের কথায় বিশ্বাস করে সমস্ত কিছু দিয়ে বসেন। আধ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর ফোনে মেসেজ আসে ব্যাঙ্কে থাকা পেনশন অ্যাকাউন্ট সমস্ত টাকা উঠে গিয়েছে।
সাইবার অপরাধীদের এবার নতুন টার্গেট পেনশনভোগীরা। লাইফ সার্টিফিকেট অন লাইন আপডেট করার নাম করে তথ্য জেনে নিয়ে টাকা হাতাচ্ছে। তাদের পাল্লায় পড়ে গোটা দেশে কয়েকহাজার পেনশনভোগী মোটা টাকা খুইয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছেন এই রাজ্যের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা। পেনশন অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চলে গিয়েছে প্রতারকদের ই ওয়ালেটে বা তাদের অ্যাকাউন্টে। এর বিপদ থেকে সতর্ক করছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
স্বরাওষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর সাইবার অপরাধীরা পেনশনভোগীদের ফোন করে তাদের পেনশন পেমেন্ট অর্ডার অর্থাৎ পিপিও আধার নম্বর, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিবরণ ও পেনশন অফিসে দেওয়া মোবাইল নম্বরের তথ্য হাতাচ্ছে। বলা হচ্ছে এগুলি পাঠালেই অনলাইনে লাইফ সার্টিফিকেট আপডেট হয়ে যাবে। এরজন্য একটি ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড পেয়ে থাকেন পেনশনভোগীরা। ওই পাসওয়ার্ড যাওয়ামাত্র প্রতারকরা আবার ফোন করে সেটি চাইছে। সেটি দেওয়ার মাত্র সাইবার জালিয়াতরা পাসওয়ার্ড দিয়ে পেনশনভোগীর অ্যাকাউন্টে ঢুকে পড়ছে। এরপর সেখান থেকে টাকা নিজেদের অ্যাকাউন্টে নিমেষে টাকা স্থানান্তর করে ফেলছে। জালিয়াতরা ভুয়ো নথি দিয়ে খোলা অ্যাকাউন্টে টাকা নিয়ে আসছে। কয়েকটি অ্যাকাউন্ট ঘুরে সেই টাকা সাইবার অপরাধীদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে পৌঁচ্ছছে।
সাইবার জালিয়াতদের হাত থেকে বাঁচতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের পরামর্শ এভাবে পেনশন অফিস থেকে ফোন করে লাইফ সার্টিফিকেট আপলোড করার কথা বলা হয়না। এরজন্য নিজস্ব একটি পোর্টাল রয়েছে। সেখানে পেনশনভোগীরা নিজেরাই ঢুকে লাইফ সার্টিফিকেট সংক্রান্ত নথি আপলোড করতে পারবেন। আর পেনশনভোগী যে জীবিত তার লাইভ ভিডিও দেখাতে হয় ওই পোর্টাল থেকে। যদি পোর্টালে কাজ করার ক্ষেত্রে অসুবিধা হয় তাহলে পেনশন অফিসার যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কর্তারা। বাইরের কোনও ব্যক্তিকে নথি হস্তান্তন না করার জন্য আধিকারিকদের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।।