এত অভিযোগের পরেও তো বাংলার মানুষ তৃণমূলের বাক্সেই ভোট দিয়েছে, পর্যালোচনা প্রদেশ কংগ্রেসে
বর্তমান | ১৪ অক্টোবর ২০২৪
রাহুল চক্রবর্তী, কলকাতা: আপাতত তৃণমূল বিরোধিতায় সুর ছড়াবে না প্রদেশ কংগ্রেস। অন্তত রাজ্য কংগ্রেসের নতুন সভাপতির বক্তব্যে তেমনই ইঙ্গিত। তৃণমূল, সিপিএম, বিজেপি রাজনৈতিক পরিসরে কি করছে, তার দিকে নজর রেখে, নিজের দলের সংগঠনকে শক্তিশালী করার দিকেই প্রাধান্য দিচ্ছে রাজ্য কংগ্রেস।
বস্তুত, অতি সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন শুভঙ্কর সরকার। আগে এই পদে ছিলেন অধীর চৌধুরী। রাজনীতির দলিলে বলা হয়ে থাকে, অধীর হলেন কট্টরপন্থী। তৃণমূল বিরোধিতা প্রথম দিন থেকেই করে আসছেন তিনি। সেখানে শুভঙ্কর সরকার হলেন অধীরের উল্টো পথের পথিক। তিনি একেবারেই নরমপন্থী। ছাত্র রাজনীতি থেকে শুভঙ্কর উঠে আসলেও গোটা বাংলায় সাড়া জাগানো রাজনৈতিক চরিত্র তিনি নন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস যখন 'ঘুমন্ত অবস্থা' থেকেই উঠতে পারছে না, তখন সেখানে নরমপন্থী শুভঙ্কর কতটা কংগ্রেসকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন প্রশ্ন থাকছেই। আর সেটা বুঝেই কী কংগ্রেস হাইকমান্ড শুভঙ্করকে বেছে নিল, যাতে তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করা যায়? শুভঙ্করও চাইছেন, এখনই তৃণমূলের বিরুদ্ধে তেড়েফুঁড়ে আন্দোলনে না নামতে। বরং ছোট ছোট পায়ে পথ ফেলে রাজ্য কংগ্রেসকে খাদের কিনারা থেকে রক্ষা করাই নয়া প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির চ্যালেঞ্জ। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, রাজ্য কংগ্রেসের অবস্থা এখন এতটাই খারাপ যে, একক শক্তিতে তারা রাজ্যের সব বিধানসভা ও লোকসভা আসনে প্রার্থীই দিতে পারবে না। যে কারণে অধীর চৌধুরী বরাবর সিপিএমের হাত ধরে চলছিলেন। কিন্তু শুভঙ্কর আবার অন্য পথের কথা ভাবছেন। কংগ্রেস কবে নিজের পায়ে দাঁড়াবে, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন তিনি।
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে হাতে বছর দেড়েক সময়। এরমধ্যে কংগ্রেসকে আদৌ কতটা শক্তিশালী শুভঙ্কর করতে পারবেন, সেই প্রশ্নটা থাকছেই। তাই সিপিএমের 'হাত' ধরা হবে কিনা, সেটা স্থানীয় স্তরের কংগ্রেস নেতৃত্বের উপর ছেড়ে দিয়েছেন শুভঙ্কর।
তাহলে তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক? এক্ষেত্রে এখনই তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক আন্দোলনে নামতে রাজি নন নতুন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। তাঁর মূল্যায়ন, তৃণমূল ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে এত দুর্নীতির অভিযোগ করার পরেও তো বাংলার মানুষ জোড়াফুলের বাক্সে ঢেলে ভোট দিয়েছেন। সেটা অস্বীকার করা যাবে না। শেষ লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল ২৯টি আসনে জয়ী হয়েছে। সেখানে কংগ্রেস জিতেছে মাত্র একটি আসনে। তাহলে আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত নিজের দলকে আগে শক্তিশালী করা। বাকি দলগুলি কি করছে, সেটা পর্যবেক্ষণে থাকবে।