সঙ্কট কাটছে না, কেমন আছেন অনুষ্টুপ-পুলস্ত্যরা? অবস্থা ভাল নয়
আজ তক | ১৪ অক্টোবর ২০২৪
রবিবার রাতে শারীরিক অবস্থায় অবনতি ঘটায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় ধর্মতলায় অনশনকারী চিকিৎসক পুলস্ত্য আচার্যকে। জানা যাচ্ছে অনশনকারী জুনিয়র ডাক্তার পুলস্ত্য আচার্যকে সময় মতো হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও পরিস্থিতি এখনও সঙ্কটজনক। তবে চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন তিনি। পুলস্ত্যের স্বাস্থ্যপরীক্ষার পর এমনটাই জানিয়েছেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের (এনআরএস) মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জয়দীপ দেব।
অনিকেত মাহাতো, আলোক ভার্মা, অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়ের পর অনশনকারী চিকিৎসকদের মধ্যে চতুর্থ পুলস্ত্য যিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ধর্মতলায় অনশনের ৮ দিনের মাথায় অসুস্থ হন জুনিয়র চিকিৎসক পুলস্ত্য আচার্য। অসুস্থ অনশনকারী জুনিয়র চিকিৎসককে রবিবার রাতেই ভর্তি করা হল এনআরএসে। এনআরএস হাসপাতালেরই অ্যানাস্থেসিয়া বিভাগের প্রথম বর্ষের পিজিটি পুলস্ত্য আচার্য।
এনআরএস সূত্রে জানা যাচ্ছে, কিছুটা স্থিতিশীল, তবে এখনও বিপন্মুক্ত নন অনশনকারী জুনিয়র চিকিৎসক পুলস্ত্য আচার্য। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর দেহে সোডিয়াম-পটাসিয়ামের মাত্রা কমে গিয়েছে। পাশাপাশি রক্তচাপও কম ছিল পুলস্ত্যর। পীঠে অসম্ভব ব্যথা, মাথা ঘোরা, বমি ভাব ছিল তাঁর। সব থেকে বড় চিন্তার বিষয় ছিল, পুলস্ত্যর ইউরিন হচ্ছিল না। আর সেটা নিয়েই সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন ছিলেন চিকিৎসকরা। এখন ইউরিন আউটপুট স্বাভাবিক। ইউএসজি, ইকো, ইএসজি হয়েছে। সকালে আরও বেশি কিছু রক্ত পরীক্ষার পরিকল্পনা রয়েছে।
এই নিয়ে টানা দশ দিনে পড়ল জুনিয়র চিকিৎসকদের অনশন। দুদিন আগেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন অনিকেত মাহাতো, অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়রা। অনিকেতের শারীরিক সমস্যার সঙ্গে পুলস্ত্যর শারীরিক সমস্যার কিছুটা মিল পেয়েছেন চিকিৎসকরা। দুজনেরই দেহে কিডোন বডির মাত্রা বেড়ে ৩+ হয়েছিল। তাতে কিটোন বডি বাড়তে থাকলে কিটো অ্যাসিডোসিস হয়ে কোমায় যেতে পারে রোগী। ধীরে ধীরে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকল হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। এই বিষয়টিই চিন্তায় ফেলে চিকিৎসকদের। অনিকেত অবশ্য এখন আপাতত অনেকটাই সুস্থ। পুলস্ত্যকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন চিকিৎসকরা। পুলস্ত্যর চিকিৎসায় আপাতত পাঁচ সদস্যের মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। এখনও তাঁরা স্যালাইন চলছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের (এনআরএস) মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জয়দীপ দেব জানিয়েছেন, “পুলস্ত্য আচার্য সাত দিন ধরে অনশনে ছিলেন। টানা অনশনে থাকার ফলে তাঁর মানসিক সচেতনতা কমে যায়। তাঁর অবচেতন হওয়ার মতো পরিস্থিতি হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে না খাওয়ার কারণে তাঁর পেটে ব্যথা হয়।” তিনি আরও বলেন, “সময় মতো তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও এখনও পরিস্থিতি সঙ্কটমুক্ত নয়। সোডিয়াম, পটাশিয়াম পরীক্ষা করা হয়েছে। রিপোর্টে দেখা গিয়েছে তাঁর শরীরে সোডিয়াম, পটাশিয়াম এবং অ্যাসিড বেসের মাত্রার পরিবর্তন হওয়ার ফলে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। দীর্ঘ সময় না খাওয়ার জন্য মূলত এই সমস্যাগুলি হয়েছে। তাঁর এখন চিকিৎসা চলছে। আরও নানা রকমের পরীক্ষানিরীক্ষা করা হবে। শরীরে জলশূন্যতা রয়েছে। তাঁকে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। তাঁর অবস্থা এখন স্থিতিশীল হলেও বিপদ কাটেনি।” জয়দীপ জানান, পুলস্ত্যের চিকিৎসার জন্য এনআরএসে পাঁচ সদস্যের একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। সেই দলে রয়েছেন জেনারেল মেডিসিন, চেস্ট, কার্ডিও, নেফ্রো এবং অ্যানাস্থেসিয়া বিভাগের বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরাই পুলস্ত্যের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করছেন। সেই টিমের তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চলছে।
এদিকে অনুস্থ হয়ে পড়া আরেক অনশনকারী চিকিৎসক অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। অন্যদিকে, আরও দুই চিকিৎসক অনিকেত মাহাতো এবং অলোক ভার্মার অবস্থাও স্থিতিশীল বলে জানা গিয়েছে। শনিবার রাত ১০.৩০টা নাগাদ অনুষ্টুপের পেটে প্রবল যন্ত্রণা শুরু হয়। এরপর রাত ১১টা নাগাদ অ্যাম্বুল্যান্সে অনুষ্টুপকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতা মেডিক্যালে। অনুষ্টুপকে ভর্তি করা হয় সুপার স্পেশালিটি ব্লকের সিসিইউ-এ। 'অনুষ্টুপের চিকিৎসায় কলকাতা মেডিক্যালে ৮ সদস্যের বোর্ড রাখা হয়েছে সিসিইউতে, জানিয়েছেন কলকাতা মেডিক্যালের MSVP। অনুষ্টুপের শরীরের কোথা থেকে রক্তক্ষরণ, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের প্রধানের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
অনশনকারী জুনিয়র ডাক্তার অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এখনও তাঁর বিপদ কাটেনি। এমনটাই জানালেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারেরা। হাসপাতালে অনুষ্টুপকে তরল খাবার দেওয়া হচ্ছে। জ্ঞানও রয়েছে, তবে এখনও তিনি দুর্বল। শরীরে জলশূন্যতাও আছে। চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন, অবস্থা স্থিতিশীল। কলকাতা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল বিশ্বাস জানিয়েছেন, কোথাও রক্তক্ষরণ হলে মলের রঙ কালো হয়ে যায়। এন্ডোস্কোপি করে দেখা হবে, কোথাও রক্তক্ষরণ হচ্ছে কিনা। নাড়ির গতি, রক্তচাপ-সবই স্বাভাবিক রয়েছে। সোডিয়াম,পটাশিয়ামও পরীক্ষা করা হয়েছে। আরও কিছু পরীক্ষা করা হবে। এই পর্যায়ে একটু গোলমাল হলে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টেরও সম্ভাবনা থাকে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। তাই চিকিৎসার সব দিক বিবেচনা করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে সময় লাগবে।
অনুষ্টুপের পায়ুদ্বার থেকে রক্ত আসছিল। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এখন অনুষ্টুপ ভালো আছেন। সিভিয়ার পেপটিক আলসার থেকে ব্লিডিং হচ্ছিল। ওষুধ দিয়ে সেটা সামলানো গিয়েছে। ৮০ মিলিগ্রামের হিউজ ইনজেক্টিবল প্যান্টোপ্রাজোল দেওয়া হয়েছে পরিস্থিতি সামলাতে। ব্লিডিং বন্ধ হয়েছে ভোর-রাত থেকে। ফলে রক্ত দিতে লাগেনি। বৃহস্পতিবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন আরজি করের জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতো। এরপর শনিবার রাতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন অনশনরত ডাক্তারি পড়ুয়া অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়। শনিবার রাতে গ্রিন করিডর করে ধর্মতলার ধর্নামঞ্চ থেকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয় অনুষ্টুপকে। অন্যদিকে, শনিবার সকালে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ভর্তি করা হয় অলোক কুমার ভার্মাকে। রবিবার সকালে তিনি স্থিতিশীল আছেন বলে খবর। চিকিৎসক অনিকেত মাহাতোর শারীরিক অবস্থা আগের থেকে উন্নতি করেছে বলে খবর।
এদিকে, জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন আন্দোলনের সমর্থনে সোমবার শহরের একাধিক বেসরকারি হাসপাতালও ওপিডি পরিষেবা বন্ধ রেখে প্রতিবাদে সামিল হয়েছে।