• ‘স্বাস্থ্যসচিবের অপসারণ, নির্বাচন, থ্রেট কালচারের প্রসঙ্গই নেই’! মুখ্যসচিবকে জবাবি-মেল জুনিয়রদের
    আনন্দবাজার | ১৪ অক্টোবর ২০২৪
  • অনশন প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানিয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিবের ইমেল এবং ‘কাজের খতিয়ান’ দিয়ে স্বাস্থ্যভবনের প্রেস বিজ্ঞপ্তির জবাব দিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে রবিবার রাত ১০টা ২২ মিনিটে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট’-এর তরফে ওই জবাবি ইমেল পাঠানো হয়েছিল। সোমবার সন্ধ্যায় তা প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। ঘটনাচক্রে, যখন মুখ্যসচিবের সঙ্গে চিকিৎসক সংগঠনের বৈঠক ‘নিষ্ফল’ হয়ে গিয়েছে।

    মুখ্যসচিব ও স্বাস্থ্যভবনের তরফে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের ১০ দফা দাবির সাত দফা মেনে নেওয়ার যে দাবি করা হয়েছিল, তালিকা ধরে ধরে তার ‘অসারত্ব’ তুলে ধরেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। পাশাপাশি, অতিরিক্ত পাঁচটি ‘পয়েন্ট’ তুলে ধরে তাঁরা জানিয়েছেন রাজ্য সরকার তাঁদের কোনও দাবিগুলির প্রতি নীরব থেকে গিয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি, রাজ্য সরকারের পাঠানো নথিতে ‘অনুল্লিখিত’ সেই পাঁচ দফা দাবি হল—

    ১. রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের অপসারণ ও তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত ২. মেডিক্যাল কলেজগুলির ছাত্র সংসদের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে নির্বাচিত পড়ুয়াদের পরিচালন সংক্রান্ত বিভিন্ন কমিটিতে অন্তর্ভুক্তিকরণ ৩. ‘থ্রেট কালচার’ সংক্রান্ত অভিযোগগুলির তদন্তে পৃথক কমিটি গঠন ও দোষীদের শাস্তি। ৪. হাসপাতালগুলিতে স্বাস্থ্য পরিষেবা সচল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যায় চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাকর্মী এবং গ্রুপ ডি কর্মচারী নিয়োগ ৫. পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলে এবং হেল্‌থ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

    গত শুক্রবার (১১ অক্টোবর) জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন মুখ্যসচিব পন্থ। আন্দোলনকারীদের তরফে তাঁদের বিভিন্ন দাবির কথা জানিয়ে বৃহস্পতিবার যে ইমেল পাঠানো হয়েছিল, তারই জবাবি ইমেলে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষবায় ‘স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে’ অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি। অন্য দিকে, স্বাস্থ্যভবনের তরফে শুক্রবারই একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জুনিয়র ডাক্তারের দাবির তালিকায় থাকা বিভিন্ন কাজের খতিয়ান দেওয়া হয়েছিল। এ বার সেই দাবিগুলির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন আন্দোলনকারীরা।

    চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এবং মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালগুলিতে পরিকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে রাজ্য সরকার বিভিনন্ন প্রকল্পগুলির জন্য ১১৩ কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ করেছে বলে জানানো হয়েছিল স্বাস্থ্য ভবনের বিবৃতিতে। দাবি করা হয়েছিল, আরজি কর ছাড়া অন্য হাসপাতালগুলিতে কাজ ৯০ শতাংশ শেষ। ১৫ অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে বলেও আশাবাদী স্বাস্থ্যভবন। দেওয়া হয়েছিল নতুন ৭০৫১টি সিসিটিভি, ৮৯৩টি নতুন ডিউটি রুম এবং ৭৭৮টি ওয়াশরুম নির্মাণের পরিসংখ্যান।

    কিন্তু জুনিয়র ডাক্তারেরা এই দাবিগুলির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তা ছাড়া, হাসপাতালগুলিতে মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১১১৩ জন মহিলা পুলিশকর্মী নিয়োগের কথাও জানিয়েছিল স্বাস্থ্যভবন। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি, গত ১৮ জুলাই নবান্নের বৈঠকে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ‘সাধারণ কার্যবিধি’ (এসওপি)-র যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, হাসপাতালগুলিতে তার কোনও নমুনা দেখা যায়নি। মেডিক্যাল পড়ুয়াদের অভিযোগ দায়ের করার ক্ষেত্রে কমিটি গঠনের কাজও প্রতিশ্রুতি মতো এগোয়নি।

    প্রসঙ্গত, গত দু’মাস ধরেই আরজি করে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় উত্তাল রাজ্য। আঙুল উঠেছে রাজ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল দশার দিকেও। প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করেছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। গত ৯ অক্টোবর রাতে মুখ্যসচিবের সঙ্গে স্বাস্থ্যভবনে বৈঠকে বসেছিলেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু তা ফলপ্রসূ হয়নি বলেই দাবি তাঁদের। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, সরকার নতুন কিছু বলছে না। শুধু মৌখিক আশ্বাস দিয়ে অনশন তুলে নেওয়ার কথা বলছে। যদিও অনশন যে এ ভাবে উঠবে না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তার পরে ১০ দফা দাবি জানিয়ে মুখ্যসচিবকে মেল পাঠিয়েছিলেন তাঁরা। এর মধ্যে চার অনশনকারী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মুখ্যসচিবের কাছে, জুনিয়র ডাক্তারদের আবেদন, ‘‘যাঁর অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের শারীরিক অবস্থারও অবনতি হচ্ছে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)