এই সময়: পুজো মণ্ডপের পর এ বার আরজি কর নিয়ে বিক্ষোভের আঁচ গঙ্গার ঘাটেও। ‘জাস্টিস ফর আরজি কর’ স্লোগান দিয়ে কয়েক দিন আগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ন’জন যুবক। শেষ পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্ট থেকে তাঁরা জামিন পেলেও মণ্ডপের আশপাশে বিক্ষোভ দেখানোর উপর কার্যত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আদালত। এই আবহে বিসর্জনের সময়ে কলকাতার গঙ্গার ঘাটে আরজি কর নিয়ে স্লোগান দেওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন প্রশাসন। তার জন্য প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় গঙ্গার ঘাটে পুলিশি নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। সিসিটিভি-তেও নজর রাখা হচ্ছে।দশমীর দিন থেকেই কলকাতার বিভিন্ন গঙ্গার ঘাটে শুরু হয়েছে প্রতিমা নিরঞ্জন। সোমবার সংখ্যাটা আরও বেড়েছে। এর মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভাইরাল ভিডিয়ো (যার সত্যতা যাচাই করেনি ‘এই সময়’) ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, বিসর্জনের শোভাযাত্রায় একদল মহিলা স্লোগান দিচ্ছেন, ‘বাজছে কাঁসর বাজছে ঢাক, তিলোত্তমা বিচার পাক’। এর পরেই সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। বিসর্জনের সময়ে এই ধরনের স্লোগান দিলে পুলিশ আইনি ব্যবস্থা নেবে।
গঙ্গার যে সব ঘাটে বিসর্জন হয়, সেখানে পর্যাপ্ত পুলিশ, ডিজ়াস্টার ম্যানেজমেন্ট টিম এবং প্রশিক্ষিত ডুবুরি রাখা হয়েছে। প্রতিটি ঘাটের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার এক অফিসার। তাঁদের উপর রয়েছেন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার এবং ডিসি পদমর্যাদার অফিসাররা। নজরদারি জন্য সাতটি ঘাটে ওয়াচ টাওয়ার বানানো হয়েছে। ডিসি কমব্যাট পুলিশের নেতৃত্বে থাকছে বিশেষ উদ্ধারকারী দল। তার মধ্যে পাঁচ জন ডুবুরি রয়েছেন। শহরের মোট ২৩৮টি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। সেগুলির দায়িত্বে থাকবেন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদার অফিসাররা। বিসর্জনের জন্য সকাল ৮টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত কলকাতায় ট্রাক ও লরি চলাচল বন্ধ থাকবে। নিমতলা, বাজে কদমতলা-সহ গঙ্গার বিভিন্ন ঘাটে নৌকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার জানিয়েছেন, বিসর্জনের জন্য গঙ্গার সমস্ত ঘাটে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা হয়েছে। আদালতের নির্দেশিকা মেনে বিসর্জনের পরেই সমস্ত কাঠামো তুলে নেওয়া হচ্ছে। পুজোর ফুল, পাতা, সিঁদুর, তেল কিছুই গঙ্গায় ফেলতে দেওয়া হচ্ছে না। সেগুলো আলাদা জায়গায় সংগ্রহ করা হচ্ছে। ঘাট সাফাইয়ের জন্য সর্বক্ষণ কাজ করছেন পুরসভার কর্মীরা।
এর মধ্যেই বিসর্জনের একটি ভিডিয়ো ঘিরে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এক্স হ্যান্ডেলে ওই ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। যেখানে দেখা যাচ্ছে, দুর্গাপ্রতিমা করাত দিয়ে কেটে জলে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিরোধী দলনেতার দাবি, কৃষ্ণনগর পুরসভার নির্দেশে এই কাজ করা হয়েছে। এই ছবি অনেকেরই আবেগে আঘাত হেনেছে। তৃণমূলের রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ বলেন, ‘হয়তো পরিবেশ বাঁচাতেই এই কাজ। কিন্তু এটা আরও সতর্ক ভাবে করা উচিত ছিল যাতে মানুষের ভাবাবেগে আঘাত না লাগে।’