নবদ্বীপে ছাঁচের তৈরি লক্ষ্মীপ্রতিমা সরার পাইকারি বাজার জমে উঠেছে
বর্তমান | ১৫ অক্টোবর ২০২৪
সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: সেজে উঠেছে নবদ্বীপের ছাঁচের ও সরার লক্ষ্মীমূর্তির পাইকারি বাজার। বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতারা আসছেন। নবদ্বীপের বাজারের ওপর নির্ভর করেই নবদ্বীপ এলাকার বিভিন্ন পাড়ার মৃৎশিল্পী পরিবারগুলির দিন চলে। আর লক্ষ্মীপুজো এলেই লক্ষ্মীলাভের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়।
নবদ্বীপের দণ্ডপাণিতলা ঘাট পালপাড়া এবং কপালিপাড়া বণিকনগর সব মিলিয়ে প্রায় ২৫টি পরিবার প্রতিমা গড়ে। বংশপরম্পরায় কেউ ছাঁচে ফেলে প্রতিমা গড়েন, আবার কেউ লক্ষ্মীর সরা তৈরি করেন। দশ ইঞ্চি থেকে শুরু করে বারো ইঞ্চি, কুড়ি ইঞ্চি পর্যন্ত বিভিন্ন সাইজের ছাঁচের লক্ষ্মীমূর্তি তৈরি করেন। পাইকারের হাত ধরে এইসব মূর্তি নবদ্বীপ সহ পার্শ্ববর্তী বর্ধমান জেলার বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যায়। এমনকী স্থানীয় বাজারেও এগুলির ব্যাপক চাহিদা। তাই নবদ্বীপ দণ্ডপাণিতলা ঘাট পালপাড়ার এইসব শিল্পীদের তৈরি ছাঁচের মূর্তি এবং নবদ্বীপের বণিকনগরের সরা শিল্পীরা শেষ মুহূর্তেও তৈরি করছেন লক্ষ্মীর সরা। তবে শিল্পীরা জানালেন, মাটি, রং এবং জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের তুলনায় লাভের পরিমাণ অনেকটাই কমেছে। তবুও প্রতিবছরই লক্ষ্মীপুজোর সময় এখানকার ছাঁচের মূর্তি একটা আলাদা কদর থাকে। তবে দিনের পর দিন পরিশ্রম অনুযায়ী লাভ না হওয়ায় লক্ষ্মীর সরা তৈরির শিল্পী প্রায় কমে গিয়েছে।
বণিক নগরের বাসিন্দা প্রবীণ মৃৎশিল্পী রবীন্দ্রনাথ পাল বলেন, তিন পুরুষ ধরে লক্ষ্মীর বিভিন্ন সরা তৈরি করে চলেছি। দুর্গা, লক্ষ্মীনারায়ণ, এক লক্ষ্মী, তিন পুতুল লক্ষ্মী, জয়া ও বিজয়া, পাঁচ পুতুল, রাধাকৃষ্ণের সরা তৈরি করছি। খুবই পরিশ্রমের কাজ। কিন্তু সেই অনুপাতে আজকাল আর লাভ নেই। একটা সরা তৈরি করতে প্রথমে মাটি দিয়ে একটা যন্ত্রের মাধ্যমে মাপ মতো গোল আকৃতি করি। তারপর সেটা রোদে শুকিয়ে কাঠের উনুনের পুড়িয়ে নিতে হয়। তারপর সেই সরাকে রং তুলি দিয়ে এঁকে বিভিন্ন দেবদেবীর সরা তৈরি করি। মাটি, রং এবং জ্বালানির দাম অত্যধিক বেড়ে গিয়েছে। এক সময়ে অর্ডার নিয়ে বাজারে বিক্রি করতাম। এখন বাড়ি থেকেই বিক্রি করি। বেশ কয়েক বছর আগে এই এলাকায় বণিকনগর, কপালি পাড়ায় প্রায় ১০টির মতো পরিবার এই সরা তৈরি করত। এখন অনেকেই মারা গিয়েছেন, অনেকেই আর এই কাজ করেন না। এক একটা সরা মাত্র ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি করছি। নবদ্বীপে সরাশিল্পী এখন কমে গিয়েছে। তবে তাহেরপুরের সরা ভালোই বিক্রি হচ্ছে নবদ্বীপের বাজারে।
নবদ্বীপ বড়বাজারে দোকান উত্তম সূত্রধরের। তিনি বলেন, লক্ষ্মী সরার চাহিদা আছে। দশমীর রাত থেকে সরার বিক্রি শুরু হয়ে গিয়েছে। দুর্গামূর্তি, পাঁচ পুতুল, লক্ষ্মী, তিন পুতুল, রাধাকৃষ্ণ সব বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। তাহেরপুর থেকে এনে বিক্রি করছি। তবে একটা সময় নবদ্বীপেও সরা ভালো পাওয়া যেত। নবদ্বীপের ছাঁচের তৈরি বিভিন্ন সাইজের ছাঁচের লক্ষ্মীর চাহিদা এখনও বেশ ভালো রয়েছে। নিজস্ব চিত্র