নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি ও সংবাদদাতা, বোলপুর: দুর্গাপুজোর কার্নিভালে মাতল বীরভূমবাসী। সিউড়ি, বোলপুর, লাভপুরে কার্নিভাল উপভোগ করলেন হাজার হাজার মানুষ। কী নেই সেখানে? ঢাক, ঢোল তো ছিলই। থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নানা বাদ্যযন্ত্র ছিল। কার্নিভালে উপস্থিত দর্শকদের সামনে মন মাতানো নানা অনুষ্ঠান হয়। যোগা, রনপা, ছৌ সবকিছু মিলিয়ে রঙিন হয়ে গেল দুর্গামায়ের নিরঞ্জন যাত্রা।
গতবারের মতো এবারও সিউড়ির সার্কিট হাউস মোড়ে কার্নিভালের আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। সেখানে জেলাশাসক বিধান রায়, পুলিস সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায়, জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ, সাংসদ অসিত মাল, বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী সহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যা ৬টা থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শুরু হয়। লম্বোদরপুর সর্বজনীন পুজো কমিটি জাতীয় পতাকা হাতে শুরুতেই কার্নিভালে হাঁটে। ব্যান্ড সহযোগে তারা বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করে। এরপর একে একে বর্ণালী ক্লাব, বারুইপাড়া -মালপাড়া যুব গোষ্ঠী সহ ১১টি ক্লাব এদিন সিউড়ির কার্নিভালে অংশগ্রহণ করে। সেখানে এক একটি ক্লাব আলাদাভাবে তাদের নানা অনুষ্ঠান প্রদর্শন করে। পুজোর থিমের সঙ্গে সামঞ্চস্য রেখে সেই অনুষ্ঠান চলতে থাকে। সেখানে রাজ্য সরকারের জনমুখী প্রকল্পগুলির সাফল্যও তুলে ধরা হয়। বাংলার লোকায়ত শিল্প ঘোড়ানাচও চমকে দেয় উপস্থিত দর্শকদের।
এবারও সাঁইথিয়ায় ক্রেন দিয়ে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়। পুরসভার উদ্যোগে ময়ূরাক্ষী নদীর পাড়ের নিরঞ্জনস্থল নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। সেইমতো সারিবদ্ধভাবে উদ্যোক্তারা প্রতিমা নিরঞ্জন করে। দুবরাজপুরের হেতমপুরে শতাব্দীপ্রাচীন নিরঞ্জন শোভাযাত্রা এবারও জাঁকজমকপূর্ণভাবে হল। দশমীর রাতে হেতমপুরের দুর্গা প্রতিমাগুলি সারিবদ্ধভাবে ডাঙালে নিয়ে আসা হয়। বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে বাজি পোড়াতে পোড়াতে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
লাভপুর ব্লকেও এদিন দুর্গাপুজোর কার্নিভাল হল। বোলপুরের প্রভাত সরণিতে কার্নিভাল ঘিরে উন্মাদনায় মাতেন বাসিন্দারা। বিকেল সাড়ে ৫টায় কার্নিভাল শুরু হয়। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা, অনুব্রত মণ্ডল, বোলপুরের অ্যাডিশনাল পুলিস সুপার রাণা মুখোপাধ্যায়, পুরসভার চেয়ারম্যান পর্ণা ঘোষ। অনুব্রত কন্যা সুকন্যা মণ্ডল, জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য সুদীপ্ত ঘোষ সহ অন্যান্যরা ছিলেন। শহরের মোট ১৪টি পুজো কমিটি এই কার্নিভালে অংশগ্রহণ করে। তার মধ্যে বোলপুর অ্যাথলেটিকস্ অ্যান্ড কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন, শ্যামবাটি যুব সমিতি, বোলপুর পূর্ব উদয়নপল্লি, শুড়িপাড়া অগ্রগামী, ভুবনডাঙা আদি সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটি, স্কুলবাগান প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন কমিটি নানা আঙ্গিকে রায়বেঁশে, ঘোড়া নাচ, রবীন্দ্র নৃত্য পরিবেশন করে। এছাড়া বেশ কিছু কমিটি কন্যা ও নারী নির্যাতন, ক্যারাটে, বিশ্ব উষ্ণায়ন, ডেঙ্গু, প্লাস্টিক ব্যবহার প্রভৃতি বিষয়ে সচেতনতার বার্তা দেয়। প্রশাসনের পক্ষে প্রতিটি কমিটিকে সম্মাননা পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা বলেন, বোলপুরের মানুষ ডবল খুশি। অনুব্রত মণ্ডল ফিরে এসেছেন, সেই উন্মাদনা এলাকাবাসীর চোখেমুখে ধরা পড়েছে। অনুষ্ঠান শেষে অনুব্রত বিজয়ার শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, অশান্তি ছড়াবেন না। আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। সবাই মিলেমিশে থাকুন। অন্যদিকে লাভপুরের ফুল্লরাতলা মাঠে আয়োজিত প্রথমবারের কার্নিভাল ঘিরে উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। এবছর মোট ১৭টি পুজো কমিটি অংশগ্রহণ করে বলে জানান স্থানীয় বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ।