দাসপুরের সর্বজনীন লক্ষ্মীপুজো হার মানায় দুর্গাপুজোর জাঁকজমককেও
বর্তমান | ১৫ অক্টোবর ২০২৪
সংবাদদাতা, ঘাটাল: ঘাটাল মহকুমায় দুর্গাপুজো অনেক হলেও সর্বজনীন লক্ষ্মীপুজো সে অর্থে বেশি হয় না। তবে তিনটি সর্বজনীন লক্ষ্মীপুজোর কলেবর দুর্গাপুজোকেও ছাপিয়ে যায়। ওই তিনটি লক্ষ্মীপুজোই দাসপুর থানা এলাকায় হয়। লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষ্যে ৮-১০ দিন জনপ্লাবন সৃষ্টি হয়।
ওই তিনটি পুজোর মধ্যে সবচাইতে পুরানো পুজো দাসপুর-১ ব্লকের সাগরপুর সর্বজনীন লক্ষ্মীপুজো। পুজোটি এবার ৭৩ বছরে পড়েছে। ঘাটাল-পাঁশকুড়া সড়কের দাসপুর বাসস্টপ থেকে চার কিলোমিটার পূর্বে সাগরপুর বাজারে ওই পুজোটি হয়। পুজোর ইতিহাস থেকে জানা গেল, বাজারের পাশেই সাগরপুর স্যার আশুতোষ উচ্চ বিদ্যালয়। ওই বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বাজার এলাকায় থাকতেন। তাঁদের উদ্যোগেই সাত দশকেরও আগে খুব ছোট আকারে ওই পুজোর সূচনা হয়। পরে সেটি কলেবরে বাড়ে। ওই পুজো কমিটির সম্পাদক বলরাম হাইত বলেন, এবার ৭৩ বছরের পুজোতে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার বাজেট রয়েছে। আট দিন ধরে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহযোগে মেলা চলবে। মূল প্রতিমা হয় বাজারের আটচালাতে। সাংস্কৃতিক মঞ্চ ও মেলা হয় স্কুল মাঠে। ওই পুজোটির সঙ্গে দাসপুর-১ এবং দাসপুর-২ ব্লকের আটটি গ্রামের মানুষ সরাসরি যুক্ত থাকেন। পুজোয় কোনও থিম না হলেও ২০-৩০টি গ্রামের মানুষ পুজোটির জন্য সারা বছর মুখিয়ে থাকেন। আট দিনই প্রচুর ভিড় হয়। সাগরপুরের বাসিন্দারা বলেন, এই এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা এই লক্ষ্মীপুজোকেই তাঁদের সেরা উৎসব হিসেবে দেখেন।
ঘাটাল-পাঁশকুড়া সড়কের পাশেই সোনামুই হাট সর্বজনীন লক্ষ্মীপুজোটি এবার ৬৮ বছরে পড়ল। দাসপুর-২ ব্লকের এই পুজোটিতে বিশালাকার মন্দিরের আদলে মণ্ডপ হচ্ছে। এবার ওই পুজো কমিটি মাদুর দিয়ে মন্দিরের আকৃতির বিশালাকার একটি মণ্ডপ তৈরি করছে। মন্দিরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে থাকছে বাহারি আলোর সাজ। সোনামুই হাটে একটি সর্বজনীন দুর্গাপুজো হলেও এই লক্ষ্মীপুজোর আয়োজন ও কলেবর দুর্গাপুজোকে পিছনে ফেলে দেয়। ওই পুজো কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নিমাই অধিকারী ও দীপক শাসমল জানান, এলাকার ২০-২২টি গ্রামের মানুষ লক্ষ্মীপুজোর জন্য সারা বছর প্রতীক্ষায় থাকেন। পুজো দেখতে ভিড় করেন পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর সহ আশপাশের জেলার মানুষ। লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষ্যে বাড়ি বাড়ি আত্মীয়স্বজনের ভিড় হয়। পুজো উপলক্ষ্যে আট দিন ধরে মেলা চলে।
সোনামুই থেকে কয়েক কিলোমিটার দক্ষিণে ঘাটাল-পাঁশকুড়া সড়কের পাশে দুই মেদিনীপুরের সীমানায় হয় খুকুড়দহ সর্বজনীন লক্ষ্মীপুজো। লক্ষ্মী বাজার কমিটি পরিচালিত এই পুজোটি এবার ৬৫ বছরে পড়েছে। ওই পুজো কমিটির দুই কর্তা সুব্রত মণ্ডল ও অমিত আদক বলেন, ‘এবারে আমাদের থিম ‘নীল পরীর দেশে’। পরিবেশ বান্ধব টিস্যু পেপার দিয়ে সুদৃশ্য মণ্ডপের পাশাপাশি রেশম সুতো দিয়ে তৈরি আকর্ষণীয় প্রতিমা থাকবে। এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ আলোর রোশনাই।’ পুজো উপলক্ষ্যে অন্যান্য বছরের মতো এবছরও খুকুড়দহ হাইস্কুল মাঠে আট দিন ধরে মেলা চলবে। সেই সঙ্গে হবে সমাজ সচেতনতামূলক নানা অনুষ্ঠান, সেমিনার, স্বাস্থ্য মেলা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা।
শ্রীপুর ইয়ং স্টার ক্লাবের পরিচালনায় সর্বজনীন লক্ষ্মীপুজো এবার ৩০তম বর্ষে পদার্পণ করল। পুজো কমিটি সূত্রে জানানো হয়েছে, তাঁদের পুজোতেও বিশালাকার মণ্ডপ হচ্ছে। মণ্ডপের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে থাকবে প্রতিমা ও আলোকসজ্জা। সাতদিন ধরে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। বিসর্জনের আগে দেবীবরণ। চন্দ্রকোণায় তোলা নিজস্ব চিত্র