পুজো মিটলেও পর্যটকে ঠাসা দীঘা রেল ও সড়কে নাভিশ্বাস অবস্থা যাত্রীদের
বর্তমান | ১৫ অক্টোবর ২০২৪
শ্রীকান্ত পড়্যা, তমলুক: যৌবন হারানো রানি, প্রজাকূল ও রাজ্যপাট ছেড়ে গ্রিকবীর ইউলিসিস জীবনের শেষবিন্দু পর্যন্ত উপভোগ করতে ভ্রমণে বেরিয়ে ছিলেন। তাঁর সেই বিখ্যাত উক্তি আজও ভ্রমণ পিপাসুদের অনুপ্রেরণার আধার— ‘আই উইল ড্রিঙ্ক লাইফ টু দ্য লিজ’।
ইউলিসিসকে বাঙালি যতটা অনুসরণ করেছে, বিশ্বের কোনও জাতি সম্ভবত ততটা আজও করে উঠতে পারেনি। তাই, হয়তো ‘পায়ের তলায় সর্ষে’ কথাটা কবে যে বাঙালির জাত্যভিমানে ঢুকে পড়েছে তা টেরও পাননি কেউই। একটু ফুরসৎ পেলেই পাহাড়, নদী, সমুদ্র, জঙ্গল কিংবা চা-বাগান। ঝোলা কাঁধে নিয়ে পথকে ভৃত্য বানিয়ে ফেলে বাঙালি। দুর্গাপুজো মানে লম্বা ছুটি। চারদিন বরাদ্দ প্যান্ডেল হপিং। সঙ্গে পেটপুজো। পরিশ্রান্ত…। তবুও পরিশ্রমে ছুটির আহ্লাদ একেবারে নিঙড়ে নিতে চেষ্টার খামতি রাখছেন না কেউই। স্বভাবতই পুজো মিটতেই সোমবার থেকে দীঘায় ভিড়। সমুদ্র সৈকতে জনসুনামি। ওল্ড দীঘা থেকে নিউ দীঘা, মন্দারমণি কিংবা তাজপুর সর্বত্র একই ছবি। কানায় কানায় পূর্ণ হোটেল। মালিকদের মুখে চওড়া হাসি।
দীঘাগামী লাইনের লবণ সত্যাগ্রহ স্টেশন। স্টেশনে যাওয়ার রাস্তায় এখনও হাঁটুসমান জল। সেই জল পেরিয়ে কোলে-পীঠে বাচ্চা এবং লাগেজ নিয়ে এদিন প্রায় ৪০০ জন টিকিট কাটেন। সকাল ৯টা ২৬মিনিটের দীঘা লোকাল। ঠাসা ভিড় নিয়ে থামল স্টেশনে। কোনও কামরাতেই পা রাখার জো নেই। রীতিমতো যুদ্ধ করে সাকুল্যে ৪০-৫০ জন যাত্রী উঠলেও বাকিরা পারলেন না। হতাশ হয়ে কেউ ধরলেন বাড়ির পথ। কেউ আবার সড়ক পথ। স্টেশনের টিকিট বুকিং এজেন্ট ভরতচন্দ্র দাস বলছিলেন, ‘মহাষষ্ঠী থেকেই দীঘা যাওয়ার লোকালে ভিড় বেড়েছে। এদিন সকালেই স্টেশনে ভিড় দেখে আমি প্রত্যেককে বলেছিলাম, টিকিট কাটার পর আর ফেরত হয় না। কারণ, অর্ধেক যাত্রীও ট্রেনে ওঠতে পারবেন না বলে আমি নিশ্চিত ছিলাম। শেষমেশ আমার আশঙ্কাই সত্যি হল।’
শুধু লবন সত্যাগ্রহ স্টেশন নয়, বাজকুল থেকে হেঁড়িয়া—ছবিটা একই। প্রতিটি স্টেশনে দীঘা যাওয়ার জন্য পর্যটকের ভিড়। রেলপথের পাশাপাশি নন্দকুমার-দীঘা ১১৬বি জাতীয় সড়কেও যাত্রীদের দীঘা যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা। প্রাইভেট গাড়ির সামনে দীর্ঘ লাইন। হেঁড়িয়ার কাছে জাতীয় সড়ক সংকীর্ণ। সেখানে যানজট মোকাবিলা করতে হিমশিম খেতে হয় পুলিসকে। ট্রাফিক পুলিস ছাড়াও ভূপতিনগর থানার পুলিস ডিউটিতে ছিল। যানজটে জেরবার হন দীঘাগামী পর্যটকরা।
এমনিতেই পুজোর ক’টা দিন দীঘা ছিল হাউসফুল। পুজো শেষ হওয়ার পরও লোকজন কমেনি। সন্ধ্যার পর আলোয় ঝলমল করছে ওল্ড দীঘার বিশ্ববাংলা উদ্যান। সেই উদ্যানকে সাক্ষী রেখে
এদিন সন্ধ্যায় সেল্ফি তুলছিলেন সবংয়ের প্রাথমিক শিক্ষিকা অতসী জানা, নিরুপমা পড়িয়া সহ আরও অনেকে। নিউ দীঘার হলিডে হোম, ক্ষণিকা, মেরিনা, ব্লু-ভিউ ঘাটে যেন জনজোয়ার। সন্ধ্যার পর সি-বিচে শুধু কালো মাথা। স্থায়ী এবং অস্থায়ী বিভিন্ন স্টলে কেনাকাটার ভিড়। পুজোর ছুটির এই ভিড়ে ব্যবসায়ী এবং ক্ষুদ্র মাঝারি দোকানদাররাও বেশ খুশি। দীঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, ‘পুজোর ছুটিতে দীঘায় ভালো ভিড় হচ্ছে। প্রতিটি হোটেলের রুম প্রায় ভর্তি। হোটেল ব্যবসায়ী থেকে দোকানদাররা ভীষণ খুশি।’ -নিজস্ব চিত্র