নিজস্ব প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা: বাঁধ ভাঙা ভিড়, উচ্ছ্বাস যেন ফেটে পড়ল দুই দিনাজপুর ও মালদহের পুজো কার্নিভালে। সোমবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত মানুষের থিকথিকে ভিড় দখল নিল গৌড়বঙ্গের শহরগুলির রাজপথ। পুজো উদ্যোক্তাদের কেউ ঢাক, ঢোল, তাসার বোলে সুসজ্জিত পদযাত্রায় মন মাতালো। আলোকসজ্জায় চোখ ধাঁধিয়ে দিল কেউ। আবার কেউ নাচে, কেউ গানে নজর কাড়ল আট থেকে আশির। বিকেল থেকেই মানুষের ভিড় জমতে থাকে জেলা শহরগুলির কার্নিভাল প্রাঙ্গণের আশপাশে। অনেকেই আবার চেয়ার নিয়ে এসে রাস্তার ধারে বসে পড়েন কার্নিভাল উপভোগ করতে। সেখানে চলে বসে খাওয়া দাওয়া গল্পগুজব।
প্রশাসনের উদ্যোগে এদিন সন্ধ্যা থেকে রায়গঞ্জ শহরে গীতাঞ্জলি মোড়ে শুরু হয় পুজোর কার্নিভাল। শহরের ও আশপাশের ১৫টি পুজো উদ্যোক্তা এতে অংশ নেয়। সহজপাঠ থিম নির্ভর পুজো অমর সুব্রত ক্লাব, রাজমহল থিম নিয়ে বিপ্লবী ক্লাবের পদযাত্রা রীতিমতো নজর কেড়েছে। পাশাপাশি রায়গঞ্জ অরবিন্দ স্পোর্টিং ক্লাব, প্রতিবাদ ক্লাব, দেহশ্রী ব্যায়ামাগারের প্রতিমা, সুসজ্জিত পদযাত্রা মন মাতায় সকলের। এছাড়াও নেতাজি শান্তি ক্লাব, হাইওয়ে ইউথ ক্লাব, বিধাননগর বারোয়ারী, তুলসীতলা বিবেক সঙ্ঘ নানা সাংস্কৃতিক আয়োজনে সকলের নজর কাড়ে। রায়গঞ্জ থানার আইসি বিশ্বাশ্রয় সরকার বলেন, অতীতের ঘটনাবলী মাথায় রেখেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা আঁটোসাঁটো করা হয়। কোনও গোরু বা ষাঁড় যাতে কার্নিভাল প্রাঙ্গণে ঢুকে না যায় তার জন্য সিভিক ভলান্টিয়ার ও পুলিসকে আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছে। এদিন কার্নিভাল মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি পম্পা পাল, রায়গঞ্জ পুরসভার প্রশাসক সন্দীপ বিশ্বাস, জেলাশাসক সুরেন্দ্র কুমার মিনা সহ বিশিষ্টরা।
কার্নিভালের জমজমাট আয়োজনে পিছিয়ে ছিল না বালুরঘাট শহরের দুর্গাপুজো কমিটিগুলিও। শহরের বিএম হাইস্কুল থেকে ওই কার্নিভালের শোভাযাত্রা শুরু করে সার্কিট হাউসের সামনে আসে। এরপর সেখানে মূলমঞ্চের সামনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নানা থিমের পরিবেশন করে করে ফের নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছায়। এবার গতবারের তুলনায় কম সাতটি ক্লাব কার্নিভালে অংশ নেয়। কার্নিভালের মূল মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক বিজিন কৃষ্ণা, জেলার পুলিস সুপার চিন্ময় মিত্তাল, জেলা পরিষদের সভাধিপতি চিন্তামণি বিহা সহ অন্যান্যরা।
অন্যদিকে বিজয়া দশমীর পর কার্নিভালে মাতলেন মালদহবাসী। দুর্গাপুজোর বর্ণাঢ্য কার্নিভালে বৃদ্ধি পেল অংশগ্রহণকারী পুজো উদ্যোক্তাদের সংখ্যাও। কার্নিভালের পথ যেমন সাজানো হয়েছে তুলির রঙিন শিল্পে, তেমনই সোমবার সন্ধ্যায় ঝলমল করে উঠেছে কার্নিভাল চত্বর। সুষ্ঠুভাবে কার্নিভাল উদযাপনের জন্য এদিন সাজিয়ে তোলা হয় মালদহ শহরের সুকান্ত মোড় থেকে রথবাড়ি মোড় পর্যন্ত রাস্তা। বিকেল ৫টা থেকেই ভিড় জমাতে শুরু করেন সাধারণ মানুষ থেকে বিভিন্ন পুজো কমিটির সদস্যবৃন্দ।
মালদহের জেলাশাসক নীতিন সিঙ্ঘানিয়া বলেন, গত বছর ২২টি পুজো কমিটি কার্নিভালে অংশ নিয়েছিল। এবার অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮টিতে। প্রশাসন ও পুলিসের পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিত্বরাও এই কার্নিভালের শরিক হচ্ছেন। তাঁদের জন্য প্রয়োজনীয় সব বন্দোবস্ত রাখা হচ্ছে। কার্নিভালের জন্য যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিস। ইংলিশবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, আমরা প্রশাসন ও পুলিসের সঙ্গে সমন্বয় রেখে এই কার্নিভাল উদযাপনের শরিক হয়েছি। পুরসভা নিজস্ব দায়িত্ব পালন করছে।