• দুর্গাপুজোর কার্নিভালে মাতল গোটা উত্তরবঙ্গ
    বর্তমান | ১৫ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা: অসুর দমন থেকে আনন্দময়ীর বিভিন্ন রূপ। বাজনার বোল থেকে ডমরু বা ডুগডুগি হাতে নৃত্য। সোমবার শিলিগুড়িতে দুর্গা কার্নিভালের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় ধরা পড়ল এমন ছবি। শুধু তাই নয়, পাহাড়ের লায়ন ড্যান্স থেকে সমতলের আদিবাসী নৃত্য। সঙ্গে নজরকাড়ে মাদল ও উলুধ্বনি। সব মিলিয়ে জমজমাট ছিল শিলিগুড়ি শহরের লাইফ লাইন হিলকার্ট রোড। তাতে উপচে পড়ে দর্শনার্থীদের ভিড়। তা কোনওরকমে সামাল দেয় পুলিস। পুজো কার্নিভাল ঘিরে একই ধরনের ছবি কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি শহরে ধরা পড়েছে। 


    পুজো কানির্ভাল উপলক্ষে এদিন সকালেই সাজিয়ে তোলা হয় হিলকার্ট রোড। আলপোনা দেওয়া হয় মহাত্মা গান্ধী মোড়। বিকেলেই সফদর হাসমিচকে প্রতিমা নিয়ে জড়ো হন পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা। সন্ধ্যা হতেই আলোর মালায় ঝলমলিয়ে ওঠে গোটা রাস্তা। তখন মহাত্মা গান্ধী মোড়ে সরকারি মঞ্চে কার্নিভালের সূচনা করেন মেয়র গৌতম দেব। ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকার, পুর চেয়ারম্যান প্রতুল চক্রবর্তী, পুলিস কমিশনার সি সুধাকর, তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভানেত্রী (সমতল) পাপিয়া ঘোষ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এতে অংশ নেয় ১৩টি পুজো কমিটি। 


    এরপর সুসজ্জিত ট্যাবলো নিয়ে হাসমিচক থেকে মহানন্দা নদীর লাল মোহন মৌলিক নিরঞ্জন ঘাটের দিকে এগয় পুজো কমিটিগুলি। প্রথমে একটি পুজো কমিটি মহাত্মা গান্ধী মোড়ে নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে নৃত্য পরিবেশন করে। অসুর দমনের দৃশ্য দেখানো হয়। আরএকটি পুজো কমিটি দুর্গা ও কালীর বিভিন্ন রূপ তুলে ধরে নিজেদের নৃত্যে। আবার একটি পুজো কমিটি শিবের বেশে ডমরু হাতে নৃত্য পরিবেশন করে। আরএকটি পুজো কমিটির ঢাকের তালে নৃত্য নজর কেড়েছে। এভাবেই এগিয়ে যায় শোভাযাত্রা। মহানন্দা নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয় প্রতিমা। এরই মাঝে পাহাড়ের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর সিংসের বেশে ‘লায়ন ড্যান্স’ ও শিলিগুড়ি মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর আদিবাসী নৃত্য পরিবেশন করে। নদীঘাটে বসে মেলা। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হিলকার্ট রোড, মহাত্মা গান্ধী মোড়, মহানন্দা নদীর সেতু, ঘাট ও মেলায় নামে জনস্রোত। 


    কোচবিহার শহরের বিশ্বসিংহ রোডের মিনা কুমারী চৌপথি থেকে শুরু হয় কার্নিভাল। শেষ হয় হরিশপাল মোড়ে। ১০টি পুজো কমিটি অংশ নেয়। কার্নিভালের উদ্বোধন করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ। অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুমিতা বর্মন, জেলাশাসক অরবিন্দ কুমার মিনা, পুলিস সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য, কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, এনবিএসটিসি’র চেয়ারম্যান পার্থপ্রতিম রায় সহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। 


    আলিপুরদুয়ার শহরের মাধব মোড়ে সরকারি মঞ্চ থেকে কার্নিভালের উদ্বোধন করেন জেলাশাসক আর বিমলা। উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি স্নিগ্ধা শৈব, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান মৃদুল গোস্বামী, পুলিস সুপার ওয়াই রঘুবংশী, পুরসভার চেয়ারম্যান প্রসেনজিৎ কর প্রমুখ। প্যারেড গ্রাউন্ড থেকে শহরের লাইফ লাইন বক্সা ফিডার রোড ধরে প্রতিমা নিয়ে পুজো কমিটিগুলি কালজানি নদীঘাটের দিকে এগিয়ে যায়। এজন্য বক্সা ফিডার রোডে ছিল জনস্রোত।


    এদিকে, তিস্তাপাড়ের শহর জলপাইগুড়িতে কার্নিভালে উঠে এল এক টুকরো ডুয়ার্স। আদিবাসী থেকে মেচ, রাভা নানা জনজাতির সংস্কৃতির মেলবন্ধনে রঙিন হয়ে ওঠে বিসর্জনের শোভাযাত্রা। কার্নিভালে যোগ দেয় ১৫টি পুজো কমিটি। মুহুরিপাড়া সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটির ট্যাবলোতে চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্স করেন অসমের বিহু শিল্পীরা। দিশারীর ট্যাবলোতে নজর কাড়ে মহিলা ঢাকির দল। অংশ নেওয়া প্রতিটি পুজো কমিটিকে পুরসভা ও জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা করে পুরস্কার দেওয়া হয়। এছাড়াও কার্নিভালে প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় হওয়া পুজো কমিটিকে পরে পুরস্কৃত করবে জেলা প্রশাসন।
  • Link to this news (বর্তমান)