নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: বন্ধুদের সঙ্গে পুজো দেখতে গিয়েছিলেন মেয়ে। ফিরতে রাত হয়ে যায়। এতেই বকুনি দেন মা। অভিযোগ, তারই জেরে মায়ের সঙ্গে ঝামেলা বাঁধে মেয়ের। শুরু হয় তর্কাতর্কি। রাগের মাথায় মেয়ে ধাক্কা মারে মাকে। দেওয়ালে লেগে মায়ের মাথা ফেটে যায়। বাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশীরা মিলে ওই মহিলাকে তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যান। এদিকে ঘটনার পর বাথরুমে গিয়ে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মঘাতী হন ওই কলেজছাত্রী। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটে সপ্তমীর রাতে জলপাইগুড়ি শহরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ওল্ড পুলিস লাইন এলাকায়।
পুলিস সূত্রে খবর, মৃতের নাম তুহিনা রায় (২১)। তিনি কলকাতায় পড়াশোনা করতেন। পুজোর ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন। কিন্তু ঠাকুর দেখা নিয়ে যে এমন ঘটনা ঘটে যাবে, তা পাড়াপ্রতিবেশীরাও কখনও ভাবেননি। এদিকে, ঘটনার পর থেকে মুখে কুলুপ এঁটেছে গোটা পরিবার। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিস। শুধু কি ঠাকুর দেখতে গিয়ে দেরি হওয়া নাকি এর পিছনে অন্য কিছু রয়েছে, তাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। কারণ পুজোর দিন কয়েক আগেই একটি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন ওই কলেজছাত্রী। মারধরের ঘটনাও ঘটে।
অভিযোগ, ৫ অক্টোবর রাতে জলপাইগুড়ি শহরের স্পোর্টস কমপ্লেক্সের পিছনে করলা নদীর ধারে মাদকাসক্তদের ছবি তুলতে গিয়ে আক্রান্ত হন তিনি। এনিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছিলেন। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলার অম্লান মুন্সি বলেন, আমার ওয়ার্ডেই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাটি ঘটেছে। যতটুকু জানতে পেরেছি, ড্রাগ চক্রের বিরুদ্ধে মেয়েটি নিজেই লড়াই চালাচ্ছিল। এনিয়ে সম্প্রতি আক্রান্তও হয়। বিষয়টি পুলিসকে লিখিতভাবেও জানায়। কিন্তু ভয় পেয়ে তার পরিবার এসব ঝামেলা থেকে সরে আসতে বলেছিল মেয়েকে। মেয়েটি সরে আসেনি। কিন্তু পরিবার তার পাশে না দাঁড়ানোয় অভিমান ছিল মেয়েটির। সপ্তমীতে ঠাকুর দেখে মেয়ের বাড়ি ফিরতে দেরি হওয়ায় খুবই উদ্বিগ্ন ছিলেন তাঁর মা। ফলে মেয়ে বাড়ি আসতেই তিনি বকাবকি করেন। মা-মেয়ের কথা কাটাকাটি শুরু হয়। সেসময় কোনওভাবে ধাক্কা লেগে মেয়েটির মায়ের মাথা ফেটে যায়। সঙ্গে সঙ্গে লোকজন তাঁকে জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যান। এদিকে, ঘটনার অনুশোচনায় সম্ভবত মেয়েটি বাথরুমে গিয়ে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করে। কাউন্সিলারের দাবি, কাদের বিরুদ্ধে ওই কলেজছাত্রী লড়াই করতে চাইছিলেন, পুলিসকে তা খুঁজে বের করতে হবে। গত ৫ অক্টোবর কারা তাঁর উপর হামলা চালিয়েছিল, তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। পুলিস জানিয়েছে, সবটাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।