সংবাদদাতা, বসিরহাট: একসময় টাকির এই জমিদার বাড়ির পুজো ঘিরে আনন্দ করত অধুনা টাকি ও বাংলাদেশের সাতক্ষীরার মানুষ। একসময় দেশভাগ হয়। কিন্তু তারপরও দুই বাংলার মানুষের আবেগের অন্যতম পুজো হিসেবে থেকে যায় টাকি পূবের জমিদার বাড়ির পুজো। প্রায় ৩০২ বছর বয়স হল এ বাড়ির দুর্গার। জমিদার বাড়ির রেওয়াজ মেনে এবছরও ২৪ বেয়ারার কাঁধে চেপে ইছামতী নদীতে বিসর্জনে গেলেন দুর্গা। শনিবার এই রাজকীয় শোভাযাত্রা দেখতে রাস্তার দু’পাশজুড়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করল মানুষ। রাজবাড়ি ঘাটে হল বিসর্জন। মোবাইল ও ক্যামেরায় ছবি তুললেন কাতারে কাতারে দর্শনার্থী।
৩০২ বছর আগে জমিদার সূর্যকান্ত রায়চৌধুরী পুজোর সূচনা করেছিলেন। তখন বাংলা অবিভক্ত। পুজো নিয়ে মেতে থাকত টাকি ও সাতক্ষীরা। এরপর দেশভাগ। তবে তখন সীমান্তে তেমন কড়াকড়ি না থাকায় ওপার বাংলার প্রচুর মানুষ অংশগ্রহণ করতেন। জমিদারির সময় বন্দুকের টোটা ফাটিয়ে নবমীতে হতো মহিষ বলি। আজ তা বন্ধ। বদলে চালকুমড়ো, আখ ইত্যাদি বলি হয়। এছাড়া আর কোনও নিয়মের পরিবর্তন ঘটেনি বলে পরিবারের দাবি। অষ্টমীতে যত মানুষ জমিদারবাড়ি আসেন তাঁদের সকলের জন্য থাকে আগেকার দিনের মতোই ভোগ-প্রসাদের ব্যবস্থা। দশমীতে এই বাড়ির প্রতিমা সবার প্রথমে ইছামতীতে বিসর্জন দেওয়ার রীতি। তারপর টাকির অন্যান্য জমিদার বাড়ি এবং বারোয়ারি পুজোর বিসর্জন হয়।
বিসর্জনের আগে দশমীতে কচুশাক আর পান্তা ভাত খাইয়ে বিদায় জানানো হয় দুর্গাকে। তখন যাঁরা সেখানে উপস্থিত থাকেন সকলেই সেই প্রসাদ পান। বিসর্জন দেখতে টাকিতে ভিড় জমে পর্যটকদের। নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য নাম এক পর্যটক বললেন, ‘এই আমলেও ২৪ বেয়ারার কাঁধে চড়ে প্রতিমার বিসর্জন হয়! এরকম ছবি দেখতে পাব ভাবতে পারিনি। টাকি আসলে পুরনো শহর। জমিদার আমলের বহু কিছু বহাল আছে। এ সব দেখে মুগ্ধ আমরা।’ নিজস্ব চিত্র