নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘পুজোয় হেলমেটবিহীন বাইকচালকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ উৎসব শুরুর আগেই এই বার্তা দিয়েছিলেন কলকাতার সিপি মনোজ ভার্মা। কিন্তু তাতে বিন্দুমাত্র কর্ণপাত না করে হেলমেট ছাড়াই রাস্তায় নেমেছিলেন হাজার হাজার বাইকচালক। ফলও মিলল হাতেনাতে! জরিমানা বাবদ পকেট থেকে ৫০০ টাকা করে গচ্চা দিলেন সাত হাজার হেলমেটবিহীন চালক। তৃতীয়া থেকে একাদশী পর্যন্ত বেপরোয়া বাইকচালকদের কড়া হাতে শায়েস্তা করল কলকাতা পুলিস। লালবাজার সূত্রে খবর, পুজোর দিনগুলিতে ট্রাফিকবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে মোট ১৪ হাজার ৩৩৯টি মামলা রুজু করা হয়েছে।
শহরের পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠক থেকে শুরু করে সরেজমিনে মণ্ডপ পরিদর্শনে গিয়েও পথ দুর্ঘটনা রুখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন সিপি। একটিও দুর্ঘটনা যেন না ঘটে, সেটাই ছিল লক্ষ্য। কিন্তু তৃতীয়ার সন্ধ্যা থেকেই দেখা যায়, পুলিসের নির্দেশকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে হেলমেট ছাড়াই রাস্তায় দাপাচ্ছেন বাইকচালকরা। কিছুটা ফাঁকা রাস্তা পেলেই বেপরোয়া গতিতে বাইক ছুটিয়েছে তারা। বেপরোয়া চালকদের রুখতে ২৬টি ট্রাফিক গার্ড এলাকায় ‘সারপ্রাইজড নাকা চেকিং’ চালায় কলকাতা পুলিস। সেই সূত্রেই ১৪ হাজারের বেশি মামলা রুজু করে তারা। এর মধ্যে ৪ হাজার ৩৪৩ জন গাড়ি চালককে জরিমানা করা হয়েছে। বিপজ্জনকভাবে বাইক চালানোর অভিযোগে পুলিসের খাতায় নাম উঠেছে ৯৬৮ জনের। মদ্যপ অবস্থায় বাইক চালানোর জন্য ৭৩৩ জনকে এক হাজার টাকা করে জরিমানার পাশাপাশি মামলাও করেছে পুলিস। বিভিন্ন ট্রাফিক বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে ১ হাজার ১৮৬ বাইকচালকের বিরুদ্ধে। এছাড়া, অভব্য আচরণের অভিযোগে মোট ১ হাজার ৩১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতা পুলিস। বালিগঞ্জ, হেয়ার স্ট্রিট, পার্ক স্ট্রিটের মতো থানাগুলিতে অভব্যতায় অভিযুক্তদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। পুলিস জানিয়েছে, রাস্তায় প্রকাশ্যে মদ্যপানেও অভিযুক্ত হয়েছেন অনেকে। কলকাতা পুলিসের আওতাধীন এলাকা থেকে প্রায় ৩০ লিটার মদ বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিস।
নয়া সিপির কথামতো হেলমেটবিহীন বাইকচালকদের বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিস কড়া হলেও পুজোয় সময় পথ দুর্ঘটনার সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। পুজোর মধ্যে শহরে মোট ১৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে পাঁচটি দুর্ঘটনায় ছ’জন মারা গিয়েছেন। দুর্ঘটনার ‘হট স্পট’ সেই ই এম বাইপাস ও বাসন্তী হাইওয়ে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ফাঁকা বাইপাসে বাইকের বেপরোয়া গতির জেরে আটটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। সপ্তমীর সকালে বাসন্তী হাইওয়েতে বাইকের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মৃত্যু হয় নাজিবুল হকের (৩৫)। ওই দিনই ভোরে গার্ডেনরিচ থানা এলাকার তারাতলা রোডে গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় এক পথচারীর। সপ্তমীর রাতে ই এম বাইপাসের উপরে ছিট কালিকাপুরে বাইক রেসিং করতে গিয়ে মৃত্যু হয় আরও একজনের। তাঁর নাম বিশ্বজিৎ দাস (১৯)। নরেন্দ্রপুর থানা এলাকার বাসিন্দা তিনি।