উপায়ান্তর না পেয়ে লক্ষ্মী ফিরে পেতে শেষপর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়ার দ্বারস্থ হলেন উদ্যোক্তারা। নিজেদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে করবাগান পুজো কমিটি লিখল, ‘অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি, করবাগানে প্যান্ডেল থেকে মা লক্ষ্মীকে কোনও এক দর্শক নিয়ে চলে গিয়েছেন। তাই অনুরোধ করছি মা লক্ষ্মীকে ফিরিয়ে দিয়ে যাওয়ার জন্য...।’ এ অমঙ্গলের খবর মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে দাবানলের মতো। সবার আকর্ষণে চলে আসে করবাগান। ‘লক্ষ্মীহীন’ মণ্ডপ দেখতে হাজির হন বহু দর্শক। সোশ্যাল মিডিয়ায় পুজো কমিটির পোস্টের নীচে নানা ধরনের মন্তব্য ভাসিয়ে দেন নেটিজেনরা। কয়েকজন কিঞ্চিৎ মজাও করেন। কেউ কেউ কলকাতা পুলিসের দ্বারস্থ হওয়ার পরামর্শ দেন। করতে করতে কেটে যায় গোটা একটা দিন। তারপরও প্রতিমা ফিরে না পাওয়ায় ফের ফেসবুকে আর একটি পোস্ট করে কমিটি। পাশাপাশি কোনও ধরনের বিতর্ক না ছড়ানোর আবেদনও জানায়। পুজো উদ্যোক্তাদের অন্যতম সদস্য সুশান্ত সাহা জানিয়েছেন, এবার পুজোয় উল্টোডাঙা করবাগানের থিম ছিল ‘ভবপ্রীতা’। দেবী দুর্গাকে মা অন্নপূর্ণা রূপে বানিয়েছিলেন শিল্পী গৌরাঙ্গ দাস। মূল প্রতিমার পিছনের দেওয়ালে পাঁচটি ফ্রেমে রাখা হয়েছিল লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ ও শিবকে। সেই ফ্রেমগুলি অক্ষুণ্ণ অবস্থাতেই রয়েছে। এর পাশাপাশি দেবী অন্নপূর্ণা হওয়ায় মণ্ডপসজ্জায় রাখা হয়েছিল ধানের বস্তা, ভাতের হাঁড়ি, খাবার বয়ে নিয়ে যাওয়ার পাত্র, থালা ইত্যাদি। এর পাশাপাশি কাঠের সিংহাসনে ছোট আকারের একাধিক লক্ষ্মীপ্রতিমাও ছিল। অভিযোগ, ঠাকুর দেখতে এসে সিংহাসন থেকে একটি ছোট লক্ষ্মীপ্রতিমা তুলে নিয়ে গিয়েছেন এক ব্যক্তি। সিসি ক্যামেরায় বিষয়টি ধরাও পড়েছে। তবে তাঁর পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। ভিড়ের সুযোগে লক্ষ্মী তুলে নিয়ে পিঠটান দিয়েছেন। বাধ্য হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। তবে সে ব্যক্তি সাড়া দেননি। প্রতিমা চুরির খবর শুনে ছেলেকে নিয়ে সোনারপুর থেকে করবাগানে দেখতে আসেন অরিজিৎ দত্ত নামে এক ব্যক্তি। তাঁর সরস মন্তব্য—‘লেখা পড়ে মনে হচ্ছিল মূল মূর্তিটিই বোধহয় চুরি হয়ে গিয়েছে। এসে বুঝলাম, তা নয়। তবে সামনে লক্ষ্মীপুজো। আগেভাগে এবং নিখরচায় প্রতিমা জোগাড়ের কাজটা সেরে ফেললেন ওই ব্যক্তি।’ সম্মান দত্ত নামে এক ব্যক্তি তা শুনে বললেন, ‘ভাবুন, ওই লোকটি চোরাই লক্ষ্মী পুজো করছেন বাড়িতে। কেউ মূর্তিটি চোরাই বলে চিনে ফেললে তো মহা বিপদ। সে রিস্ক কি নেবেন তিনি?’ অমিতা পাল নামে এক মহিলা তা শুনে বললেন, ‘কী লক্ষ্মীছাড়া মানুষ গো! ঠাকুরকে পর্যন্ত ছাড়ে না!’