সুজয় মণ্ডল, বসিরহাট: বাংলাদেশের পরিস্থিতি অশান্ত। তার জন্য নিরাপত্তার কড়াকড়ি। এর প্রভাব সরাসরি এসে পড়ল ইছামতী নদীর দুই পাড়ে। প্রতি বিজয়ায় দুর্গার বিসর্জন ঘিরে কার্যত দুই বাংলার মিলনক্ষেত্র হয়ে ওঠে টাকি। ইছামতী থাকে ভিড়ে ভরে। এবার সে ছবি ফুটে উঠল না। ফলে ২৪ বেয়ারার কাঁধে চড়ে ঘাটে এলেন দেবী, ঢাক বাজল করুণ সুরে, ধুনুচি জ্বলল, মিষ্টিমুখও হল। কিন্তু তবুও দুই বাংলা মিলল না বলে ফিকেই থাকল নিরঞ্জন পর্ব। এর আগে ভাষাদিবসেও সীমান্ত অঞ্চলে দুই বাংলার মিলন হয়নি। এবার বিসর্জনের সময়ও অনুরূপ পরিস্থিতি মন খারাপ করে দিল সকলের।
রবীন্দ্রনাথের প্রিয় নদী ইছামতী। কবিগুরু নিজে ইছামতী হতে চেয়েছিলেন। লিখেও গিয়েছেন তা। এছাড়া মানুষের বিশ্বাস, দুর্গা নিজেও এই নদীতে বিসর্জন পেলে শান্তি পান। ফলে মানুষের ভক্তি আর আবেগের প্রাবল্যে সর্বদা টলটল করে ইছামতীর জল। জমিদারির সেই সময় থেকে হাল আমল পর্যন্ত দুর্গার বিসর্জন ঘিরে হইহই রইরই অবস্থা থাকে এখানে। দুই বাংলার আত্মীয়-অনাত্মীয় হাজার হাজার মানুষ ‘শুভ বিজয়া’ বলে মাঝনদীতে একে অপরকে সম্ভাষণ জানান। এবার সে আন্তরিকতার সুযোগ অনুপস্থিতই থেকে গেল। সর্বসাকুল্যে এপার বাংলার গোটা পাঁচেক প্রতিমা নৌকায় মাঝ নদীতে নিয়ে গিয়ে বিসর্জন দেওয়া হল। বাকি প্রায় ২০টির মতো প্রতিমা রাজবাড়ি ঘাট থেকে ভাসিয়ে দেওয়া হল নদীতে। টাকির উল্টোদিকে ওপার বাংলার সাতক্ষীরা। এবার সাতক্ষীরায় ইছামতীর পাড় খাঁ খাঁ করল শনি, রবি, সোমবার। বিসর্জনে অংশ নিতে দেখা গেল না ওপার বাংলার কোনও পুজো কমিটিকে। সাতক্ষীরায় ধুমধাম করেই দুর্গার পুজো হয় প্রতিবছর। তবে এবার অশান্তি। তাই শোনা গিয়েছে, পুজোর সংখ্যা কমেছে। মাত্র কয়েকটি পুজো হয়েছে মাত্র। ফলে চিরকাল ধরে চলা বিসর্জন রীতি এবছর খেল জোর ধাক্কা।
তপনকুমার জানা নামে এক মাঝি বলেন, ভেবেছিলাম অনেকে বেড়াতে আসবেন। নৌকায় ইছামতীতে ঘুরবেন। কিন্তু নৌকা ভাড়া করলেন না কেউ। অন্যান্যবারের তুলনায় এ বছর মানুষ এলেন খুব কম। একটুও ব্যবসা হল না।’ নদীতে প্রতিমা বিসর্জনে নামতে গেলে বিএসএফের অনুমতি নিতে হয়েছে সবাইকে। পাশাপাশি স্থলভাগে ছিল পুলিসের কড়া নজরদারি। টাকির গেস্ট হাউস ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, ‘অন্যান্য বছর কোনও ঘর খালি থাকে না। কিন্তু এবার তেমনভাবে পর্যটকরা ঘর বুক করেননি।’ টাকিতে ঘুরতে এসেছিলেন লেকটাউনের নিরঞ্জন সরকার। তিনি বলেন, ‘আগে যতবার টাকিতে বিসর্জনের সময় এসেছি প্রতিমা সমেত প্রচুর নৌকা দেখেছি ইছামতীতে। এবার তেমনভাবে দেখতে পেলাম না।’ টাকিতে বিসর্জনের সময় আসেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী। তিনি বলেন, ‘পর্যটকদের বিশ্রামের ব্যবস্থা থেকে শুরু করে পানীয় জলের সুবন্দোবস্ত করা আছে। আগামী দিনে আরও কিছু কাজ হবে।’ এর পাশাপাশি হিঙ্গলগঞ্জের লেবুখালি, হাসনাবাদ ও বসিরহাটেও ধুমধাম করে প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছে। ছিল পুলিস ও প্রশাসনের কড়া নজরদারি।