সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: দুর্গাপ্রতিমা বিসর্জনের আগে আতসবাজি প্রদর্শনী দেখতে গিয়ে ব্যালকনি ভেঙে মৃত্যু হয় স্ত্রীর। আর সেই শোকে তৎক্ষণাৎ নিজের জীবনই শেষ করে দিলেন স্বামী! প্রায় তিনতলা থেকে বিদ্যুৎবাহী তার জড়িয়ে মরণঝাঁপ দেন তিনি। আতসবাজির আলোর রোশনাই মুহূর্তে বদলে যায় আঁধারে। পুরুলিয়া রাসমেলা এলাকার এই রোমহর্ষক ভিডিও ভাইরাল। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি।
শহর পুরুলিয়ার রাসমেলায় ছাদের কার্নিশ ভেঙে ২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল সোমবার রাতেই। কিন্তু একটু বেশি রাতে স্বামীর ওই মরণঝাঁপ দেওয়ার ভিডিও পুলিশের হাতে আসে। শুরু হয় খোঁজখবর। নিমেষে ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়। যা দেখে শিউরে উঠছেন শহর পুরুলিয়ার মানুষজন। ওই ভিডিওর প্রেক্ষিতে সমগ্র ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ। রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে জখমদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছেন পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আতসবাজি প্রদর্শনীর সময় ব্যালকনি ভেঙে এক মহিলার মৃত্যু হয়। আর সেই শোকে তাঁর স্বামীও ব্যালকনি থেকে ঝাঁপ দিয়ে দেন বলে প্রাথমিকভাবে একটি ভিডিও থেকে বোঝা যাচ্ছে। তিনিও মারা গিয়েছেন। সমস্ত বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত মহিলার নাম সোনালি ধীবর, বয়স ৪২ বছর। তাঁর স্বামী ৫১ বছরের মোহন ধীবর। তাঁদের বাড়ি ঝাড়খণ্ডের বোকারো জেলার ঝরিয়াতে। সম্প্রতি পুজোয় তাঁরা পুরুলিয়া শহরের রাসমেলার বাসিন্দা মিঠু ধীবরের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। ওই বাড়ির পাশেই জেলেপাড়া সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটির মন্দির। ফি বছর দ্বাদশীতে ওই পুজো কমিটির আতসবাজি প্রদর্শনী হয় রাসমেলায়। এবার সেই প্রদর্শনীতে ভিড় হয়েছিল অন্যবারের চেয়ে বেশ বেশি। মানুষজন বাড়ির দেওয়াল, ছাদের কার্নিশ এবং ব্যালকনিতে থেকে প্রদর্শনী দেখছিলেন। প্রদর্শনীর শেষ মুহূর্তে সোনালি ধীবর অসাবধানবশত ব্যালকনি থেকে পড়ে যান। আর তার পরেই বিদ্যুৎবাহী তার জড়িয়ে ঝাঁপ দেন তাঁর স্বামী। এই ঘটনায় জখম হন ওই বাড়ির মালিক মিঠু ধীবরও। মাথায় চোট রয়েছে তাঁর। তিনি দেবেন মাহাতো গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এদিন এই ঘটনার পর সেখানে যান পুরুলিয়ার পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালি, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের ওই বর্ষীয়ান নেতা ওই রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকার মানুষজনের সঙ্গে কথা বলেন। তার পর দেবেন মাহাতো গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালেও যান শান্তিরামবাবু। তাঁর সঙ্গে ছিলেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো। ওই হাসপাতালে যান বাঘমুন্ডির তৃণমূল বিধায়ক সুশান্ত মাহাতো-সহ দলের নেতা-কর্মীরা। হাসপাতালে গিয়ে জখমদের চিকিৎসা বিষয়ে খোঁজ নেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কল্যাণ সিনহারায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অভিযান) যোধাবর অবিনাশ ভীমরাও। এলাকার মানুষজন পুলিশকে জানিয়েছেন, ওই বাড়ির ব্যালকনি আগে থেকেই দুর্বল ছিল। তার মধ্যেই আতসবাজি প্রদর্শনী দেখতে বহু মানুষ সেখানে চেপে বসায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ সেখানে পৌঁছে জখমদের উদ্ধার করে কোলে করে হাসপাতালে পৌঁছে দেন। ঘটনার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের এই উদ্ধারকাজের তারিফ করছেন শহরের মানুষ। আপাতত ওই দুর্ঘটনাস্থল গার্ড রেল দিয়ে ঘিরে রেখেছে পুলিশ।