গৌতম ব্রহ্ম: একই দিনে উৎসব এবং প্রতিবাদের উদযাপন। পুজো শেষে আজ, মঙ্গলবার শহরের প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলার রেড রোডে রাজ্য সরকারের দুর্গাপুজো কার্নিভাল। প্রায় একই সময়ে আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে দ্রোহ কার্নিভালের ডাক দিয়েছে চিকিৎসক সংগঠনে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস। আর এই কর্মসূচি ঘিরে এলাকা উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে কলকাতা পুলিশ। আর অশান্তি এড়াতে ধর্মতলার আশেপাশের এলাকায় জমায়েত নিষিদ্ধ করা হল। মঙ্গলবার সকালেই বিজ্ঞপ্তি জারি করে অন্তত ৭টি জায়গায় জমায়েতে ‘না’ বললেন পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৬৩ ধারা জারি করা হল।
বাংলার দুর্গোৎসব ইউনেস্কোর ‘কালচারাল হেরিটেজ’ তকমা পাওয়ার পর থেকেই বিসর্জনে কার্নিভাল শুরু হয়েছে এখানে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত এই কার্নিভাল। দশমীর কদিন পর রেড রোডে শহরের নামী পুজোগুলির প্রদর্শনীর মাধ্যমে গঙ্গায় ভাসান হয়। এই কার্নিভালে সরকারের তরফে আমন্ত্রিত থাকেন দেশি-বিদেশি অতিথিরা। তবে এবছর শহরে উৎসবের পরিবেশ খানিকটা ভিন্ন। পুজোর আগেই আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের মতো ঘটনা ঘটে গিয়েছে। যা নিয়ে তোলপাড় গোটা দেশ। কলকাতার পরিস্থিতি আরও খানিকটা উত্তপ্ত। উৎসব বয়কটের পথে হেঁটেছেন অনেকে। জুনিয়র চিকিৎসকরা অনশন করছেন। পুজো কার্নিভালের দিন চিকিৎসকদের একাংশ প্রতিবাদ জারি রাখতে ডাক দিয়েছেন দ্রোহ কার্নিভালের। আবার জুনিয়র ডাক্তাররাও একই পথে আজ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবেন।
পুজো কার্নিভালের দিন এই দ্রোহ কার্নিভালের কর্মসূচি প্রত্যাহারের জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব। কিন্তু তাতে সাড়া দেওয়া দূর অস্ত, সোমবার মুখ্যসচিবের বৈঠকে গিয়ে চিকিৎসকদের সংগঠন তাঁকেই দ্রোহ কার্নিভালে আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছিলেন। এসবের জেরে কার্নিভালের সময় রেড রোডে অশান্তির আশঙ্কা করছে পুলিশ। আর সেই কারণে সাবধানতা অবলম্বনে ১৬৩ ধারা জারি করে জমায়েত নিষিদ্ধ করা হল।
পুলিশ কমিশনারের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যে যে রাস্তায় জমায়েত করা যাবে না, তা হল ?
রানি রাসমণি রোড- ডোরিনা ক্রসিং থেকে পশ্চিমে নেতাজি মূর্তি পর্যন্ত। হাওড়া মেট্রো এবং রানি রাসমণি পার্ক থেকে সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাস এবং ভবানীপুর তাঁবু পর্যন্ত জমায়েতে ‘না’।
ওয়াই চ্যানেল- মেট্রো চ্যানেলের পিছন দিক থেকে জওহরলাল নেহরু রোডের ধার বরাবর ডোরিনা ক্রসিং ও রানি রাসমনি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত। এসপ্ল্যানেড রো থেকে দক্ষিণে রানি রাসমনি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত।
নিউ রোড- ডোরিনা ক্রসিং থেকে প্রেস ক্লাব সংলগ্ন পূর্ব ও পশ্চিম দিকের ফুটপাথ পর্যন্ত। ডোরিনা ক্রসিং থেকে রানি রাসমনি অ্যাভিনিউ এবং দক্ষিণে মেয়ো রোড পর্যন্ত।
মেয়ো রোড- রেড রোড থেকে জওহরলাল নেহরু রোড পর্যন্ত দুদিকের রাস্তাতেই জমায়েত নিষিদ্ধ।
আউটরাম রোড- জওহরলাল নেহরু রোড, কেপি রোড, রেড রোড এবং ডাফরিন রোডের সংযোগস্থল পর্যন্ত। উত্তর এবং দক্ষিণ উভয়মুখী রাস্তাতেই কোনও জমায়েত করা যাবে না।
অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস- রবীন্দ্রসদন থেকে ক্যাথিড্রাল রোডের পূর্ব দিকের ফুটপাথ থেকে সেন্ট পল্স ক্যাথিড্রাল পর্যন্ত। পশ্চিমে ক্যাথিড্রাল রোডের পশ্চিম দিকের ফুটপাথ থেকে মোহর কুঞ্জের সামনের রাস্তা পর্যন্ত। উত্তরে সেন্ট পল্সের দক্ষিণ দিক থেকে দক্ষিণে হরিশ মুখার্জি রোড এবং এজেসি বোস রোডের সংযোগস্থল পর্যন্ত।
জওহরলাল নেহরু রোড- ধর্মতলা ক্রসিং থেকে থিয়েটার রোড পর্যন্ত উভয় দিকের রাস্তায় জমায়েত নিষিদ্ধ। ধর্মতলা ক্রসিং থেকে শেক্সপিয়র সরণি এবং চৌরঙ্গি রোড পর্যন্ত।
কুইনস্ ওয়ে- ক্যাথিড্রাল রোড এবং শেক্সপিয়র সরণি সংযোগস্থল থেকে কাসুয়ারিনা অ্যাভিনিউ এবং হসপিটাল রোডের সংযোগস্থল পর্যন্ত উত্তর ও দক্ষিণের রাস্তায় জমায়েত নয়।
স্ট্র্যান্ড রোড ? হাওড়া ব্রিজমুখী রাস্তার সংযোগস্থল থেকে কমিশনারেট রোডের সংযোগস্থল পর্যন্ত পূর্ব ও পশ্চিম উভয় রাস্তায় নিষিদ্ধ জমায়েত।