‘জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টে’র তরফে রবিবার রাতেই ফের বলা হয়েছিল, তারা কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে পাশে চায় না। কোনও রাজনৈতিক দলকেও তারা সঙ্গে চাইছে না। বিরোধী শিবিরের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বেরা তার পরেও চিকিৎসকদের দাবির পক্ষেই সরব হওয়া অব্যাহত রাখছেন। আর এর বিপরীতে চিকিৎসকদের কটাক্ষ ও আক্রমণ জারি রাখছে শাসক দল। তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন বলেছেন, ‘‘আগে আমরণ অনশন হত, জানতাম। এখন ‘হাঙ্গার স্ট্রাইক আপটু হসপিটালাইজেশন’ হচ্ছে! এক জন করে অনশনে বসছে, তার পরে হাসপাতালে চলে যাচ্ছে।’’ জুনিয়র চিকিৎসকদের ভুল পথে পরিচালিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে তৃণমূল সাংসদের আরও মন্তব্য, তাঁদের অনশন-অবস্থানে রাজনৈতিক দল থেকে ভাড়া করা লোকজন আনা হচ্ছে, গায়িকাও আনা হচ্ছে! এই সূত্রে পরিচালক অপর্ণা সেনকেও তীব্র আক্রমণ করেছেন কল্যাণ।
বিরোধীরা অবশ্য চিকিৎসকদের পক্ষে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশেই সমাধান বার করার দাবি জানাচ্ছে। এখনও পর্যন্ত আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে রাজ্য সরকারের আলোচনা হচ্ছে মূলত মুখ্যসচিবের মাধ্যমে। বিমানবাবু সোমবার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে বলেছেন, ‘এই পরিস্থিতিতে বামফ্রন্টের দাবি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই আপনাকে অনতিবিলম্বে আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। জুনিয়র চিকিৎসকদের ১০ দফা দাবি এখনই সমাধান করতে হবে। ইতিমধ্যে বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরাও জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের প্রতি সংহতিজ্ঞাপক কর্মসূচি নিয়েছেন। এই ভাবে দিনের পর দিন ইচ্ছাকৃত ভাবে নির্বিকার থেকে রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থাতে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেওয়া যাবে না’। বিমানবাবুর বক্তব্য, ‘আশা করি, আপনি এখনই সদর্থক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন’।
বামফ্রন্টের দাবি প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা কুণাল ঘোষের পাল্টা মন্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী তো চিকিৎসকদের অবস্থান মঞ্চে গিয়েছিলেন। নবান্নে, বাড়িতে ডেকেওছিলেন।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘বিমান বসুর এই চিঠি সম্ভবত জ্যোতি বসুর জমানায় লেখা! কিন্তু জ্যোতিবাবু তখন কথা শোনেননি। চিকিৎসকদের পিটিয়ে ধর্না তুলে দিয়েছিলেন! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর মতো লাঠি চালাননি।’’
বীরভূমের সিউড়িতে গিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, সরকার দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে না-পারলে লক্ষ্মীপুজোর পর থেকে সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ব্লক, জেলা ও রাজ্যে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের ঘেরাও করা হবে। পাশাপাশিই তাঁর বক্তব্য, ‘‘আর একটা কথা বলছি কার্নিভাল বয়কট করার। কারণ, আমাদের হিন্দু শাস্ত্রে দুর্গাপুজোয় কোথাও কার্নিভালের কথা নেই। কাল (মঙ্গলবার) কিছু বিশিষ্ট, সচেতন নাগরিক কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত একটি মিছিলের ডাক দিয়েছিলেন। পুলিশ সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার পর্যন্ত অনুমতি দিয়েছে। সেখানে আমরাও থাকব, পতাকা ছাড়া। মশাল, শঙ্খ, জাতীয় পতাকা নিয়ে থাকব।’’ বিরোধী দলনেতার সংযোজন, ‘‘কলকাতার সর্ব স্তরের মানুষজনকে অনুরোধ করব, আসুন।’’
চিকিৎসকদের ডাকা ‘দ্রোহের কার্নিভাল’ সমর্থন করছে নানা নাগরিক মঞ্চ ও সংগঠন। একই সুরে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘চিকিৎসকদের আহ্বানকে সর্বতো ভাবে সমর্থন করছি। সরকার মূক ও বধির হয়ে আছে, নিষ্ঠুরতার উৎসব করছে। মুখ্যমন্ত্রী চাইলে উদ্যোগী হয়ে এই জুনিয়র চিকিৎসকদের পাশে নিয়ে আসতে পারতেন। তিনি তা করেননি। এখন প্রতিবাদের উৎসব হচ্ছে।’’ জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবিকে সমর্থন করে এ দিনই খোলা চিঠি দিয়েছেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়, অর্ধেন্দু সেন, অশোক গঙ্গোপাধ্যায়, বারীন রায়চৌধুরী, সব্যসাচী চক্রবর্তী-সহ বিশিষ্ট নাগরিকদের একাংশ।