পুজোর ক’দিন শহরের নিরাপত্তায় গত বছরের তুলনায় এ বছর কয়েক হাজার অতিরিক্ত পুলিশকর্মী মোতায়েন করেছিল লালবাজার। বেপরোয়া গাড়ির দৌরাত্ম্য রুখতে পুলিশকে নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। পথে ছিলেন চার হাজার অতিরিক্ত ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী। এ ছাড়াও ছিলেন হোমগার্ড এবং সিভিকভলান্টিয়ারেরা। তার পরেও উৎসবে দুর্ঘটনা এবং মৃত্যু আটকানো যায়নি। লালবাজার জানিয়েছে, ষষ্ঠী থেকে দশমী— এই পাঁচ দিনে পথ দুর্ঘটনায় ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছর মৃত্যু হয়েছিল মাত্র এক জনের। এ বছর পাঁচ দিনে আহত হয়েছেন ২৮ জন। গত বছর সেই সংখ্যা ছিল ২৯। লালবাজার সূত্রের খবর, ষষ্ঠীর মধ্যরাত থেকে সপ্তমী পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে শহরে। এক দিনে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া অষ্টমীতে দু’জন এবং ষষ্ঠীর দিন এক জন মারা গিয়েছেন। অষ্টমীতে গভীর রাতে কসবা থানা এলাকার ই এম বাইপাসে দু’টি বাইকের সংঘর্ষ হয়। মৃত্যু হয় দুই চালকের। রাত প্রায় আড়াইটে নাগাদ রুবির কাছে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। নবমী এবং দশমীতে কোনও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। তবে আহত হন একাধিক। নবমীতে ছয় এবং দশমীতে ন’জন আহত হয়েছেন বলে লালবাজার জানিয়েছে।
এর পাশাপাশি, পথের বিধি ভাঙারও ভূরি ভূরি দৃশ্য চোখে পড়েছে। কোথাও বাইকের পিছনে তিন জনকে বসিয়ে বেপরোয়া গতিতে ছুটতে দেখা গিয়েছে। কোথাও আবার দেখা গিয়েছে সিগন্যাল না-মানার রোগ। এ ছাড়া বিনা হেলমেটে এবং মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর মতো ঘটনাও ঘটেছে। ইএম বাইপাস, এস এন ব্যানার্জি রোড, ডায়মন্ড হারবার রোড, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড, এম জি রোড— সর্বত্র ছিল বিধিভঙ্গের ছবি। বহু ক্ষেত্রে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ।
লালবাজার যদিও বিধিভঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে। মহালয়ার পর থেকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে নাকা তল্লাশির পাশাপাশি একাধিক জায়গায় অতিরিক্ত পুলিশকর্মী নামানোর কথাও বলেছে লালবাজার। তাদের তরফে জানানো হয়েছে, ৭ থেকে ১৩ অক্টোবর বিভিন্ন বিধিভঙ্গে ১৩১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ২৯ লিটার মদ। মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোয় ৭৩৩ জন, বেপরোয়া গাড়ি চালানোয় ৯৬৮ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিনা হেলমেটে গাড়ি চালানোয় ৭১০৯ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘উৎসবের সময়ে আইন ভাঙার প্রবণতা বাড়ে। তবে পুলিশ সতর্ক ছিল। আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’