নন্দন জানান, অন্য অনেকের মতো তিনিও পেশাগত কারণে লিঙ্কডইন নামে চাকরি-সংক্রান্ত একটি সমাজমাধ্যমে স্নাতকোত্তরের শংসাপত্র আপলোড করে রেখেছিলেন। পুজোর মধ্যেই তাঁর এক বন্ধু জানান, উল্টোডাঙার জাগরণী সঙ্ঘ নামে একটি ক্লাবের পুজোয় ওই শিক্ষাগত যোগ্যতার শংসাপত্র ব্যবহার করা হয়েছে। নন্দনবলেন, ‘‘আমাকে মণ্ডপের ছবি তুলে পাঠায় ওই বন্ধুটি। আমি দেখে অবাক হয়ে যাই। আমি এ ভাবে মণ্ডপসজ্জায় শংসাপত্র ব্যবহারের অনুমতিকাউকে দিইনি। অনেক ব্যক্তিগত তথ্যও শংসাপত্রে রয়েছে। কেন ওরা আমার ওই নথি অনুমতি না নিয়ে ব্যবহার করছে? ওই পুজোর কর্তাদের কাছে জানতে পারি, মণ্ডপসজ্জার দায়িত্বে থাকা শিল্পীই এই কাজ করেছেন। পুজোকর্তারা এই বিষয়ে কিছু জানেন না।’’
কেন মণ্ডপসজ্জায় দরকার পড়ল শিক্ষাগত যোগ্যতার শংসাপত্র? জাগরণী সঙ্ঘের এক কর্তা আশিস সাহা জানান, এ বার তাঁদের পুজোর থিম ছিল ‘নেপথ্যে।’ এই থিমে সন্তানদের জন্য বাবার আত্মত্যাগ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বাবা অনেক কষ্ট করে ছেলেমেয়েকে বড় করে তোলেন। পড়াশোনা শেখান। তাই সন্তানদের শিক্ষাগত যোগ্যতার শংসাপত্র শুধু তাদের নয়, বাবারও কষ্টার্জিত ফল। কিন্তু অনেকেই সেই অবদান মনে রাখেন না— এমনই ভাবনায় সেজেছিল মণ্ডপ। এর জন্য বেশ কয়েকটি ভাল নম্বর পাওয়া শিক্ষাগত যোগ্যতার শংসাপত্রের দরকার ছিল।
নন্দন ম্যানেজমেন্ট নিয়ে স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। এখন তিনি একটি সংস্থায় কর্মরত। আশিস বলেন, ‘‘কাজটা খুবই ভুল হয়েছে। আসল শংসাপত্র ডাউনলোড করে ব্যবহার করার কোনও দরকার ছিল না। ইচ্ছেমতো নম্বর বসিয়ে শংসাপত্র বানিয়ে নিলেই চলত। শিল্পী কেন এমন করলেন, জানি না। উনি এখন এখানে নেই। ফিরলেই ওঁকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করব।’’
সাইবার বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সমাজমাধ্যম থেকে কোনও গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে নানা ধরনের সাইবার অপরাধঘটছে। তাই সমাজমাধ্যমে কী আপলোড করা হচ্ছে, সেই বিষয়ে সব সময়ে সচেতন থাকতে হবে। সরাসরি টাইমলাইনে আপলোড না করে, কাউকে কোনও গুরুত্বপূর্ণ নথি পাঠাতে হলে মেসেজের মাধ্যমে সরাসরি পাঠানো যেতে পারে। তাতে সাইবার জালিয়াতির আশঙ্কাকম থাকে।’’