ভাড়াটিয়াকে ধর্ষণের অভিযোগে ধৃত কনস্টেবল ও তাঁর স্ত্রী, অস্বাভাবিক মৃত্যু নির্যাতিতার
এই সময় | ১৫ অক্টোবর ২০২৪
এই সময়, হাবরা: ভাড়াটিয়া গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত আবার কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল। ঘটনার এক মাস পর মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত নির্যাতিতা মহিলার গত শুক্রবার শ্বশুরবাড়িতে অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় হাবরা থানা এলাকায়।পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পঞ্চায়েত সদস্যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্ত্রীর গ্রেপ্তারির পরেই পলাতক পুলিশকর্মী থানায় আত্মসমর্পণ করলে তাকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মৃতার স্বামীকেও। নির্যাতিতার পরিবারের দাবি, ধর্ষণ এবং হুমকির অভিযোগের পর পুলিশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে এই মর্মান্তিক পরিণতি হতো না ওই মহিলার।
পুলিশ এবং পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত এক মাস আগে। হাবরার এক পঞ্চায়েতের তৃণমূলের সদস্যার বাড়িতেই ভাড়া থাকতেন বছর তেত্রিশের গৃহবধূ। শ্বশুরবাড়িতে পারিবারিক অশান্তির কারণে স্বামীকে নিয়ে ওই বাড়িতে মাস ছয়েক ধরে ভাড়া ছিলেন তাঁরা। মৃতার স্বামী পেশায় কোয়াক ডাক্তার, থাকেন মধ্যপ্রদেশে। দম্পতির দুই নাবালক ছেলেমেয়ে আছে। অভিযোগ, গত ৫ সেপ্টেম্বর পঞ্চায়েত সদস্যের স্বামী পেশায় কলকাতা পুলিশের গাড়িচালক ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করে। গভীর রাতে ভাড়াটিয়ার ঘরে ঢুকে তাঁকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ।
এর পরেই ঘটনাটি জানাজানি না করতে নানা ভাবে নির্যাতিতার উপর মানসিক চাপ তৈরি করেন অভিযুক্তের পঞ্চায়েত সদস্যা। গত ৯ সেপ্টেম্বর নির্যাতিতা ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করেন পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামীর বিরুদ্ধে। পাশাপাশি হুমকি দেওয়ার অভিযোগও দায়ের করেন পঞ্চায়েত সদস্যার বিরুদ্ধে। ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিল অভিযুক্ত পুলিশকর্মী। হাবরা থানার পুলিশ জানিয়েছে, ধর্ষণের অভিযোগের পরেই কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু অভিযুক্ত পলাতক ছিল। তার দু’টি মোবাইলও বন্ধ ছিল। ঘটনার পর থেকে সে কাজে যোগ দেয়নি।
ধর্ষণের ঘটনার পরেই নির্যাতিতা ভাড়া বাড়ি ছেড়ে শ্বশুরবাড়িতে চলে যান। কিন্তু সেখানেও পরিবারকে পাশে পাননি তিনি। এই ঘটনার জেরে নতুন করে সাংসারিক অশান্তিতে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। গত শুক্রবার গভীর রাতে শ্বশুরবাড়িতে গৃহবধূর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হলে শোরগোল পড়ে এলাকায়। মৃতার দাদা বলেন, ‘পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ঘটনার পর থেকেই বোন মানসিক ভাবে খুব ভেঙে পড়েছিল। শুক্রবার গভীর রাতে শ্বশুরবাড়ি থেকেই ঝুলন্ত অবস্থায় বোনের দেহ উদ্ধার হয়। ওর মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। এর জন্য ওই পুলিশ কনস্টেবল দায়ী। ওর স্ত্রী বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মদত দিয়েছিল। বিষয়টি জানাজানি না করার জন্য বোনকে হুমকিও দিয়েছিল ওরা।’ পরিবারের অভিযোগে খুনের মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
বারাসত পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্পর্শ নীলাঙ্গি বলেন, ‘এই ঘটনা নিয়ে কোনও সালিশি সভা হয়নি। মৃতার স্বামী এবং পঞ্চায়েত সদস্যাকে তিন দিনের পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ ভিত্তিহীন। ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়ার পর থেকেই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হয়েছিল।’