সংগঠনের তরফে সরাসরি মন্ত্রীকে ফোন করেন অনিকেত বন্দ্যোপাধ্যায়। ফোনেই তিনি মন্ত্রীকে জানান, যে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ওই বাসটি ভেঙে ফেলার জন্য স্ক্র্যাপ ইয়ার্ডে আনা হয়েছে। দ্রুত যেন পরিবহণ দফতর ওই বাসটি সংরক্ষণের জন্য পদক্ষেপ করে। মন্ত্রী আশ্বাস দেন, অবশ্যই ওই ঐতিহ্যবাহী বাসটিকে সংরক্ষণ করার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ করবে তাঁর দফতর। কিন্তু রাত পর্যন্ত বাসটিকে স্ক্র্যাপ ইয়ার্ডেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একরাশ উৎকণ্ঠা নিয়ে সংরক্ষণের আবেদন জানিয়ে মন্ত্রী ও পরিবহণ সচিব সৌমিত্র মোহনকে ইমেইল পাঠান সংগঠনের সভাপতি সৌভিক মুখোপাধ্যায়। লিখিত আবেদন জমা পড়লে উদ্যোগ শুরু হয় সংরক্ষণের। কিন্তু পরিবহণ দফতরের তরফে ওই সংগঠনটিকে জানানো হয়েছিল, পরিবহণ দফতর আবার হুডখোলা ডাবল ডেকার বাস চালু করেছে। যেখানে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন যাত্রীরা। কিন্তু সংগঠনটি ৫৫ বছর ধরে পরিষেবা দেওয়া এই বাসটি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরলে, সংরক্ষণের বিষয়ে রাজি হন আধিকারিকরা। বর্তমানে বাসটিকে স্ক্র্যাপ ইয়ার্ড থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে পাইকপাড়া বাস ডিপোয়।
পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, ১৯৭০ সালে এই দোতলা বাসটি চলাচল শুরু করেছিল কলকাতা শহরে। ২০০৫ সাল পর্যন্ত কলকাতার বিভিন্ন রুটে পরিষেবা দিয়ে এসেছে এই বাসটি। কিন্তু এর পর ২০০৫ সালে সরকারি পরিবহণ ক্ষেত্রে ডাবল ডেকার বাস চালানো পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ২০১৬ সালে ওই বাসটিকে মেরামত করে আবারও চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগম। এই দোতলা বাসটির ঐতিহ্যকে কাজে লাগিয়ে নিউটাউনের ইকো পার্ক থেকে ইকো আরবান এলাকা পর্যন্ত চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু ২০২০ সালে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে সরকার পক্ষ লকডাউন ঘোষণা করে। যার জেরে বন্ধ হয়ে যায় পরিবহণ পরিষেবা। সেই থেকে বাসটি বন্ধ হয়ে পড়েছিল সরকারি বাস ডিপোয়। চলতি বছরই এই বাসটিকে স্ক্র্যাপ করার সিদ্ধান্ত নেয় পরিবহণ দফতর।
বিগত কয়েক বছর ধরে কলকাতার ঐতিহ্যপূর্ণ পরিবহণের যানগুলিকে নিয়ে একটি মিউজিয়াম করার কথা ভাবছে পরিবহণ দফতর। সেই ভাবনায় যেমন কলকাতার ট্রামকে সংরক্ষণ করে রাখার ভাবনা চিন্তা হয়েছে, তেমনই এই দোতলা বাসটিকে রাখার বিষয়ে মনস্থির করেছেন পরিবহণ দফতরের আধিকারিকরা। ওই সংগঠনের সদস্যদের মন্ত্রী জানিয়েছেন, পুজোর ছুটি মিটে গেলেই বাসটিকে সংরক্ষণের বন্দোবস্ত করবে তাঁর দফতর। সংগঠনের সদস্য অনিকেত বলেন, ‘‘কলকাতার ঐতিহ্য যেমন ট্রাম, তেমন ডবল ডেকার বাসও। দু’টির সংরক্ষণ খুব প্রয়োজন। ট্রাম শহর থেকে উঠে যাওয়ার খবরে যেমন শোরগোল পড়ে গিয়েছিল, আমরা মনে করি কলকাতা শেষ দোতলা বাসটি নিয়েও তেমনি আবেগ রয়েছে মানুষের। এমতাবস্থায় পরিবহণ দফতর আমাদের অনুরোধ মেনে নেওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। আমাদের আগামী প্রজন্ম যে কলকাতার পরিবহণের ঐতিহ্যের বিষয়গুলি জানতে পারবেন, সে কথা ভেবেই ভাল লাগছে।’’