‘বায়না ছিল না’, স্মৃতিচারণায় তিলোত্তমার বাবার কারখানায় কর্মরত ‘কাকু’
এই সময় | ১৬ অক্টোবর ২০২৪
কাঁধে ব্যাগ নিয়ে সাইকেলে করে স্কুলে পৌঁছে দিতেন ছোট্ট মেয়েটিকে। তাঁর কোলে-পিঠে চেপে বড় হয়েছে সে। পরিবারের কেউ না হলেও তাঁকে ‘কাকা’ বলেই মানতো মেয়েটি। সেই মেয়ের যে এরকম পরিণতি হবে ভাবতেই পারেননি। আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যু আজও মেনে নিতে পারছেন না নির্যাতিতার বাড়িতে কর্মরত ব্যক্তি।বাড়ির নিচে কারখানায় স্কুল ড্রেস তৈরি করেন নির্যাতিতার বাবা। বিগত ২৮ বছর ধরে আরজি করের মৃত তরুণীর বাবার পোশাক তৈরির কারখানা কাজ করেন তিনি। ছোট থেকেই দেখে আসছেন তিলোত্তমাকে। তিনি জানান, ছোটবেলা থেকেই তিলোত্তমার কোনও বায়না ছিল না। শান্ত স্বভাবের ছোট্ট মেয়েকে কাজের ফাঁকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে আসতেন মাঝেমধ্যেই। বাবার কারখানায় কর্মী হিসেবে কাজ করলেও তাঁকে ‘কাকা’ বলেই মানতেন তিলোত্তমা।
নির্যাতিতা তরুনীর বাবার এই ব্যবসায় দীর্ঘদিন ধরেই কাজের সুবাদে দিনের বেশিরভাগ সময়েই ওই বাড়িতে সময় কাটে তাঁর। গত ৯ অগস্টের আরজি করের ঘটনার খবরটা শুনে যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না। ছুটে গিয়েছিলেন হাসপাতালেও। এমন নৃশংস ঘটনার কথা শুনে রীতিমতো কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তাঁর কথায়, ‘ছোটবেলা থেকেই খুব হাসিখুশি ছিল। অনেক সময়ই স্কুলে দিয়ে এসেছি। পড়াশোনায় মনযোগী ছিল। তাঁর এই অবস্থা হবে ভাবতে পারিনি।’
দু’মাস অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে আরজি করের ঘটনার। পুজোর দিনগুলোতে বাড়ির সামনেই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যরা। প্রতিবেশীরাও যোগ দেন সেখানে। পুজোর আনন্দের ছিঁটেফোঁটা নেই গোটা পাড়ায়। নির্যাতিতার পরিবারের এক প্রতিবেশী পাড়ায় একটি ওষুধের দোকান হয়েছে। পাড়ার মেয়ে ডাক্তার হওয়ায় তাঁকে চেম্বার খোলার জন্য আবেদন করেছিলেন।
সেই প্রতিবেশীর কথায়, আমার আবেদনে রাজি হয়েই রোগী দেখা শুরু করে তিলোত্তমা। বাড়ির কাছের এই মেডিকেল ক্লিনিকে আসতো। রোগী থাকলেই একবার ফোন করলেই হাজির হয়ে যেতো। এখনও সেদিনের কথা ভাবলে চোখের কোণে জল চলে আসে। প্রতিবেশীদের সকলের একটাই কথা, মেয়েটিকে তো আর ফিরে পাওয়া যাবে না। তবে, ওঁর মা-বাবা বিচারটা যেন পায়।