সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: মা দুর্গা নয়। লক্ষ্মীর আরাধনাই যেন এই গ্রামের প্রধান উৎসব! চন্দননগরের আলোর রোশনাইয়ে এখন ঝলমল করছে গোটা গ্রাম। ৮ থেকে আশি সকলেই এখন মেতে উঠেছেন কোজাগরী উৎসবে। স্থানীয় সাংসদ বাপি হালদারের উদ্যোগে ও গ্রামবাসীদের সহায়তায় মঙ্গলবার উদ্বোধন হল মথুরাপুর ১ নম্বর ব্লকের কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদিয়ালে সর্বজনীন কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর। উদ্বোধন করলেন সাংসদ শতাব্দী রায়।
জেলায় সর্বজনীন কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর জন্য বিখ্যাত এই সদিয়াল গ্রাম। প্রতিবারই বিভিন্ন থিমের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় প্রতিমা ও মণ্ডপসজ্জা। এবার ১৮ তম বর্ষ এই পুজোর। এবছর মণ্ডপ সাজানো হয়েছে রাঁচির মাইথন ম্যারেজ হাউসের আদলে। মণ্ডপ সম্পূর্ণ প্লাইউড ও ফাইবারের তৈরি। মাতৃমূর্তি কৃত্রিম মুক্ত ও ঝিনুকের তৈরি। তালপাতা ও পাটজাত দ্রব্য দিয়ে তৈরি এবারের থিম ‘ভরতের খড়মপুজো।’
রামচন্দ্র সীতাকে নিয়ে বনবাসে গেলে হাজার অনুরোধের পরও ভরত নিজে সিংহাসনে না বসে রামচন্দ্রের খড়ম রেখে রাজ্যপাঠ চালিয়েছিলেন। ভ্রাতৃভক্তির সেই নিদর্শনকে সামনে রেখেই এবারের থিম সদিয়াল সর্বজনীনের। এছাড়াও মণ্ডপের ভিতরে ছবির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মা লক্ষ্মীকে আহ্বান জানাচ্ছেন। অন্যদিকে, ময়ূরপঙ্খী নৌকায় দেবীকে সঙ্গে নিয়ে আসছেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ আরও এক ঝাঁক সাংসদ। মণ্ডপের ভিতরেই ফাইবারের বিভিন্ন স্ট্যাচুর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে দেবী লক্ষ্মীর ৫১ টি রূপ। আটদিন ধরে চলবে এই কোজাগরী উৎসব। প্রতিদিন তুলে ধরা হবে বাংলার হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন সংস্কৃতি যাত্রাপালা, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সাংসদ বাপি হালদারের কথায়, “মা লক্ষ্মী কেবলমাত্র ঘরেই পূজিত হবেন কেন? শ্রমের বিনিময়ে উপার্জন তো সকলেই করেন। তাই ধনদেবীকে সর্বজনীন করতেই গ্রামের সব ধর্মের মানুষকে সঙ্গে নিয়েই এই বারোয়ারি পুজোর সূচনা। এই পুজো আজ গোটা সুন্দরবন পুলিশ জেলার মানুষের গর্বের বিষয়।”
৩০ লক্ষ টাকারও বেশি বাজেটের এই পুজোয় গ্রামের সাধারণ মানুষের আন্তরিক ও সক্রিয় অংশগ্রহণই এই পুজোর মূল বিষয়বস্তু। সারা বছর ধরে প্রতিমাসে স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে’ পুজোর জন্য টাকা জমান। সেই জমানো টাকাই তাঁরা একসঙ্গে তুলে দেন সাংসদের হাতে। মণ্ডপের উদ্বোধনে এদিন উপস্থিত ছিলেন রাজ্যসভা ও লোকসভার কয়েকজন সাংসদ, মথুরাপুর লোকসভার অধীন বিধানসভাগুলির বিধায়করা। ছাড়াও ছিলেন জেলা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা এবং সুন্দরবন পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও।