বিজেপির সাংগঠনিক সংবিধান অনুযায়ী প্রতি ছ’বছর অন্তর দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযান করার নিয়ম। সাংগঠনিক সংবিধানের ৯ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা রয়েছে, ছ’বছর অন্তর দল যখন এই অভিযান শুরু করবে সেই সময় কোনও নেতা বা কর্মীরই আর সদস্যপদ থাকবে না। গত ১৬ অগস্ট দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা সদস্য সংগ্রহ অভিযানের ঘোষণা করেন। এর পরে ২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দিয়ে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। বাংলায় প্রথম সারির নেতারা সেই সময়ে সদস্য হলেও রাজ্যে সার্বিক কর্মসূচি শুরু করতে পারেননি তাঁরা। এ বার রাজ্যে এই কর্মসূচির দায়িত্ব পেয়েছেন রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। দেশের সব জায়গায় কর্মসূচি শুরুর সময়েই শমীক জানিয়েছিলেন, বাংলায় পুজোর পরে কর্মসূচিতে জোর দেওয়া হবে।
এ বার তা শুরু হতে চলেছে বলেই বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। বাংলায় কালীপুজো পর্যন্ত উৎসবের আবহ থাকলেও তারই মধ্যে জেলায় জেলায় কর্মসূচি শুরু করতে হবে বলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ। মঙ্গলবার বিজেপির সল্টলেকের দফতরে এ নিয়ে পদাধিকারীদের একটি বৈঠক হয়। সেখানে অবশ্য রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ছিলেন না। এখন তিনি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গী হয়ে আলজ়িরিয়া সফরে গিয়েছেন। মঙ্গলবারের বৈঠকে অবশ্য বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা সুনীল বনসল রাজ্যের পর্যবেক্ষকেরা হাজির ছিলেন। সেখানেই ঠিক হয়েছে, এ বার বাংলায় এই কর্মসূচির মধ্যে দিয়েই আগামী বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিতে হবে। আর কী ভাবে সেই কাজ করতে হবে সেটাই জানাতে কলকাতায় আসবেন শাহ। পূর্বাঞ্চলীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (ইজ়েডসিসি)-তে শাহ একটি বৈঠক করবেন বলে ঠিক হয়েছে। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা স্তরের নেতাদেরও সেই বৈঠকে ডাকা হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে আগেই হয়েছিল বিজেপির সদস্যতা অভিযান। সে বারে সর্বভারতীয় সভাপতি হিসাবে এসেছিলেন শাহ। বিজেপির তরফে দাবি করা হয়েছিল, দেশে ১৮ কোটি সদস্য সংগ্রহের পরে বিজেপি দেশের বৃহত্তম দল। সে বার বাংলায় বিজেপির সদস্য সংখ্যা ৮৮ লাখ হয়েছিল বলেও দাবি করা হয়। এ বার কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বাংলাকে এক কোটি পার করার দায়িত্ব দিয়েছেন। মঙ্গলবারের বৈঠকে কী ভাবে এই লক্ষ্যপূরণ সম্ভব তা নিয়েও বনসল রাজ্য নেতাদের নির্দেশ দেন বলেও বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে কর্মসূচি। ২০১৯ সালে সদস্য সংগ্রহ অভিযান ভাল ভাবে করতে পারার জন্যই সে বার লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে বিজেপির ফল ভাল হয়। ২ থেকে ১৮ আসনে পৌঁছনো বিজেপির সাংসদ সংখ্যা এখন কমে ১২। বিজেপি আশা করছে, এ বারেও কর্মসূচি সফল করতে পারলে তার ডিভিডেন্ড পাওয়া যাবে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে। আর সেই বার্তাই কলকাতায় এসে দিতে পারেন শাহ।
প্রসঙ্গত, বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযানের নিয়ম অনুযায়ী, এখন একটি বিশেষ ফোন নম্বরে ‘মিস্ড কল’ দিতে হবে। সেই কাজটি সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে করাতে হবে। সেই সময়ে কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপির সাফল্য নিয়েও কথা বলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাঁরা ‘মিস্ড কল’ দেবেন তাঁদের ফোন নম্বর চলে যাবে বিজেপির জাতীয় স্তরের ‘সদস্যতা অভিযান’-এর মূল সার্ভারে। এর পরে প্রতিটি নম্বরে সদস্য হওয়ার লিঙ্ক আসবে ও তা পূরণ করতে হবে। গোটা প্রক্রিয়াটা যাতে সকলে করেন সেটাও দেখতে হবে এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বিজেপি কর্মী, নেতাদের। যাঁরা এই ভাবে কমপক্ষে ১০০ জন প্রাথমিক সদস্য করতে পারবেন তাঁরা স্থায়ী সদস্য হওয়ার সুযোগ পাবেন। সে ক্ষেত্রে অবশ্য দল সিদ্ধান্ত নেবে কাদের স্থায়ী সদস্য করা হবে। দল যাঁদের চাইবে তাঁরা ১০০ টাকা দিয়ে স্থায়ী সদস্যতা পাবেন।