• লক্ষ্মীকে শিকলে বাঁধা হতো আসানসোলের ঘাঁটিবাড়িতে
    বর্তমান | ১৬ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: ‘ঘাঁটিদের ঘরে লক্ষ্মী বাঁধা’ আসানসোলের ব্যবসায়ী মহলের বড় অংশে এই কথার প্রচলন বহু বছর ধরে। আগে লোহার শিকলে বাঁধা থাকতেন ধন, সম্পত্তির আরাধ্যদেবী মা লক্ষ্মী। এখন অবশ্য মায়ের প্রতিমা থেকে শিকল খুলে ফেলা হয়েছে। লক্ষ্মীপুজোর সময় ঘাঁটিদের লক্ষ্মী মন্দিরে তিনদিন ধরে ঘটা করে পুজো হয়। ৭০ভরি সোনার গহনায় সাজানো হয় মাকে। ভিড় উপচে পড়ে এই মন্দিরে। 

    কথিত আছে, ৮৭বছর আগে আসানসোলের তৎকালীন বড় ব্যবসায়ী সত্যকিঙ্কর ঘাঁটিকে মা লক্ষ্মী স্বপ্নাদেশ দেন। পরিবারের দাবি, মা লক্ষ্মী তাঁকে একটি নির্দিষ্ট স্থান উল্লেখ করে বলেন, সেখানে তিনি অযত্নে আছেন। সেখান থেকে তাঁকে এনে বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করে পুজো করতে নির্দেশ দেন। তারপর থেকেই ঘাঁটি গলিতে নিজের বাড়িতে মাকে এনে প্রতিষ্ঠান করেন ব্যবসায়ী। শুরু হয় ঘটা করে লক্ষ্মীপুজো। মন্দির স্থাপন করে নিত্য পুজো শুরু হয়। এখানে মা লক্ষ্মীর সঙ্গে থাকেন দুই পরী। যাঁরা কখনও মাকে একা ছাড়েন না। মা লক্ষ্মীর কৃপায় ঘাঁটিরা আসানসোলের বুকে আরও সমৃদ্ধশালী, বিত্তশালী হয়েছে। পুজো জৌলুসও লাফিয়ে বেড়েছে।

    রথের দিন থেকে মন্দিরের দালানে বসেই লক্ষ্মী প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু হয়। পুজোর দিন রামসায়ের পুকুর থেকে ঘট এনে মায়ের পুজো শুরু হয়। আসানসোলের ব্যবসায়ী পরিবারের ঘরণীরা তখন এক মনে মায়ের প্রার্থনা করতে থাকেন। পরের দিনও আরতি সহযোগে বিশেষ পুজো হয়। তৃতীয় দিনে মহা সমারোহে দামোদর নদীতে মায়ের বিসর্জন হয়। পরবর্তীকালে মায়ের সেই কাঠামো মন্দিরে নিয়ে এনে সেখানেই নিত্য পুজো হয়। বা‌ই঩রে এই প্রতিমা থাকলেও মন্দিরের অপর একটি ঘরে থাকেন ঘাঁটিদের ‘সিক্রেট লক্ষ্মী’। মায়ের এই প্রতিমা তাঁরা কোনদিনই বিসর্জন দেন না। বাইরের লোক তাঁর দর্শনও পায় না। মাকে তাঁরা সেখানেই কাচের শোকেসে রেখে পুজো করেন নিত্যদিন। এমনই দাবি, ঘাঁটিদের লক্ষ্মীমাতা মন্দির কমিটির সম্পাদক সঞ্জয় ঘাঁটির। 

    মন্দির কমিটির সভাপতি প্রবীর ঘাঁটি বলেন, দুর্গাপুজো থেকেও লক্ষ্মীপুজো আমাদের কাছে বড় উৎসব। এই পুজো উপলক্ষ্যেই দেশ বিদেশে ছড়িয়ে থাকা আমাদের সব আত্মীয় বাড়িতে ফেরে। কমিটির কোষাধ্যক্ষ সমীরণ ঘাঁটি বলেন, তিনদিন ধরেই প্রচুর মানুষ প্রসাদ গ্রহণ করে মন্দির প্রাঙ্গণে।
  • Link to this news (বর্তমান)