• আজ সন্ধ্যায় প্রথা মেনে নবদ্বীপে  পূজিত হবেন সর্বলক্ষ্মীময়ী রাধারানি
    বর্তমান | ১৬ অক্টোবর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: আজ, বুধবার লক্ষ্মীপুজোর সন্ধ্যায় প্রথা মেনে নবদ্বীপে  সর্বলক্ষ্মীময়ী রাধারানি পূজিত হবেন। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পার্ষদ নিত্যানন্দ বংশের দুই শরিক এই নবদ্বীপ  শহরে বসবাস করেন। তাঁদের মধ্যে এক শরিকের নবদ্বীপের গানতলা রোডে বলদেব জিউ মন্দির ও আর এক শরিকের ব্রজানন্দ গোস্বামী রোডে রাধা মদনমোহন মন্দির রয়েছে। প্রতিবছরই দুই পরিবার পালা করে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন সর্বলক্ষ্মীময়ী রাধারানিকে পুজো করে আসছেন। গত বছর রাধা মদনমোহন মন্দিরে এই পুজো অনুষ্ঠিত হয়। এবছর অনুষ্ঠিত হবে বলদেব জিউ মন্দিরে। যেবছর রাধারানি যে মন্দিরে থাকেন, সেই বছর সেই মন্দিরে পঞ্চম দোল ও দীপাবলীতে ১১০৮টি প্রদীপ এখনও প্রথা মেনে জ্বালানো হয়। জানা গিয়েছে, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পার্ষদ নিত্যানন্দ বংশের ষষ্ঠ পুরুষ হরিগোবিন্দ প্রভু, প্রায় ৩০০ বছর আগে সেই সময়কার ঢাকা জেলার বুতনি গ্রামে এই পুজোর প্রচলন করেন। কষ্টি পাথরের রাধা শ্যামসুন্দরের যুগল মূর্তি পুজো করতেন তিনি। সেই মূর্তিটি সব সময়ই তাঁর সঙ্গেই থাকত। যখন ধর্ম প্রচারের জন্য দেশের বাইরে যেতেন, সেই সময় মূর্তিটি তিনি সঙ্গে নিয়ে যেতেন। কিন্তু হঠাৎই একসময়  রাধার সঙ্গে যুগলে থাকা শ্যামসুন্দরের মূর্তিটি কোনও কারণে খণ্ডিত হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে সেই যুগল মূর্তিটি তৈরি করা হলেও আশ্চর্যজনকভাবে সেটিও নষ্ট হয়ে যায়। জানা যায়, পরে রাধারানি স্বপ্নাদেশ দেন শ্যামসুন্দর তাঁর মধ্যেই বিরাজমান রয়েছেন। আর কোনও আলাদা মূর্তির প্রয়োজন নেই। এই মূর্তিপুজো করলে তাঁকেও পুজো করা হবে। এরপর থেকেই নিত্যানন্দ বংশের ধারা অনুযায়ী কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন রাধারানির পুজো হয়ে আসছে।  রাধারানি ছাড়া অন্য কোনও লক্ষ্মী মূর্তির পুজো হয় না এই বংশে।

    উল্লেখ্য, নিত্যানন্দ বংশের একাদশ উত্তর পুরুষ প্রাণগোপাল গোস্বামী পূর্ববঙ্গ থেকে নবদ্বীপে আসার সময় রাধারানিকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। ব্রজানন্দ গোস্বামী রোডে রাধা মদনমোহন মন্দিরের সেবাপুজো গ্রহণ করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে প্রাণগোপাল গোস্বামীর পর পূর্ববঙ্গ থেকে নবদ্বীপে চলে আসেন তাঁর জ্ঞাতি রমণীমোহন গোস্বামীও। তিনি পূর্ববঙ্গ থেকে বলদেবকে চৈতন্যধাম নবদ্বীপে নিয়ে এসে গানতলা বলদেব জিউ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।

    ন’পুরুষ ধরে এভাবেই রাধারানির পুজো হয়ে আসছে। পূর্ববঙ্গ থেকে আসার পর এই দুই শরিক এক বছর অন্তর পালা করে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয় সর্বলক্ষ্মীময়ী রাধারানিকে পুজো করে আসছেন। তাই রাধারানির এই পুজো দুই পরিবারের কাছে নামকরণ  হয়ে গিয়েছে ‘পালার ঠাকুরুণ’। মদনমোহন মন্দিরের বর্তমান সেবাইত নিত্যানন্দ বংশের চতুর্দশ বংশধর নিত্যগোপাল গোস্বামী বলেন, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আদেশে বিবাহের পরে  নিত্যানন্দ প্রভু খড়দহে তাঁর বসতি স্থাপন করেন। তখন থেকেই বংশপরম্পরাক্রমে কোজাগরী পূর্ণিমায় সর্বলক্ষ্মীময়ী শ্রীমতি রাধারানি আরাধনার ধারা প্রবর্তিত হয়।  বর্তমানে যে মূর্তি পূজিত হচ্ছে, সেই মূর্তি হরিগোবিন্দ প্রভুর প্রতিষ্ঠিত। নিত্যানন্দ বংশের ত্রয়োদশ বংশধর বলদেব মন্দিরের সম্পাদক কিশোরকৃষ্ণ গোস্বামী বলেন, লক্ষ্মীপুজোর দিন সর্বলক্ষ্মীময়ী রূপে রাধারানির পুজো করা হয়।
  • Link to this news (বর্তমান)