নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: সকাল থেকে করলা নদীতে ভাসছিল প্রতিমার কাঠামো। কিং সাহেবের বিসর্জন ঘাটে ডাঁই হয়ে ছিল ফুল-বেলপাতা। অথচ সাফাইয়ে দেখা ছিল না পুরকর্মীদের। ফলে শহরের উপর দিয়ে বয়ে চলা নদীর দূষণ নিয়ে সরব হন পরিবেশপ্রেমীরা। বিষয়টি জানতে পেরেই তৎপর হন জলপাইগুড়ি সদরের মহকুমা শাসক তমোজিৎ চক্রবর্তী। লিখিত নির্দেশ দেওয়ার পরও কেন বিসর্জনের ঘাট সাফাইয়ের কাজে দেরি হচ্ছে, তা জানতে চান পুরসভার কাছে। এরপরই বিকেল থেকে ঘাট পরিষ্কারের কাজ শুরু করে পুরসভা। তবে নদীতে এখনও বহু প্রতিমার কাঠামো রয়ে গিয়েছে। পুরসভার দাবি, একদিনে এত কাঠামো তোলা সম্ভব নয়।
মহকুমা শাসক তমোজিৎ চক্রবর্তী বলেন, পুরসভাকে লিখিত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বিসর্জনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নদী থেকে কাঠামো তুলে ফেলতে হবে। পরিষ্কার রাখতে হবে বিসর্জনঘাট। কোনওভাবে যাতে নদী দূষণের শিকার না হয়, খেয়াল রাখতে হবে সেদিকে।
করলাকে একসময় ‘জলপাইগুড়ির টেমস’ বলা হতো। শহরের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে এই নদী। বলা যেতে পারে, জলপাইগুড়ি শহরের প্রাণ। কিন্তু নানা কারণে মরতে বসেছে সেই নদী। বহু জায়গাতেই চর গজিয়ে উঠেছে। সংস্কারের অভাবে কোথাও কোথাও পরিণত হয়েছে নালায়। তারপরও করলাকে নিয়ে আবেগের অন্ত নেই জলপাইগুড়ি শহরবাসীর। ফলে সেই নদীর বুকে প্রতিমার কাঠামো থেকে ফুল-বেলপাতা, কলাগাছ সহ পুজোর নানা সামগ্রী ভাসতে দেখে ক্ষোভ উগড়ে দেন পরিবেশপ্রেমীরা। প্রশাসনকে বিষয়টি জানান তাঁরা।
দশমী থেকেই দুর্গা প্রতিমার বিসর্জন চলছে করলা নদীতে। সোমবার শহরে পুজো কার্নিভাল ছিল। কিং সাহেবের ঘাটে ১৫টি প্রতিমার বিসর্জন হয়। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, গোটা বিসর্জন ঘাটে ফুল-বেলপাতা থেকে পুজোর নানা সামগ্রীর স্তূপ। নদীতে ভাসছে একের পর এক প্রতিমার কাঠামো। সেসব তোলার কিংবা বিসর্জন ঘাট পরিষ্কারের মতো পুরসভার কোনও কর্মীকে দেখা যায়নি। বিকেল তিনটের পর ঘাট সাফাইয়ের কাজ শুরু হয়।
জলপাইগুড়ি পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসার দেবদুলাল পাত্র বলেন, আমরা ইচ্ছে করেই নদী থেকে প্রতিমার কাঠামো তুলছি না। আমরা চাইছি, ভালোভাবে মাটি গলে যাক, না হলে কাঠামো তুলতে সমস্যা হবে। তাছাড়া ওই কাঠামো নিয়ে আমরা কী করব? সেই তো ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলতে হবে, তাই চাইছি, যদি আশপাশের কেউ ওই কাঠামো নদী থেকে তুলে নিয়ে যান। এগজিকিউটিভ অফিসারের দাবি, সোমবার রাত পর্যন্ত কার্নিভালের অনেক প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। ফুল-বেলপাতা সরানোর কাজ চলছে। তবে একদিনেই সবটা হয়ে যাবে, এমনটা নয়।