রাজ্যে চালু ‘সেন্ট্রালাইজড রেফারেল সিস্টেম’, বেড নিশ্চিত করে তবেই রেফার
বর্তমান | ১৬ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘রেফার্ড’ হয়ে বেডের জন্য লাট্টুর মতো চরকিপাক খাওয়ার ঘটনা ঘটছে রোজ। রোগী হয়রানি বাড়ছে। রোগীর মৃত্যু, চিকিৎসকদের সঙ্গে অশান্তির ঘটনাও ঘটছে আকছার। ‘রেফার’ নিয়ে এই দুর্ভোগ কাটাতে সরকারের কাছে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা ‘সেন্ট্রালাইজড রেফারেল সিস্টেম’ চালুর দাবি রেখেছেন। রাজ্যও কথা দিয়েছিল, এই ব্যবস্থার পাইলট প্রজেক্ট শুরু হবে ১৫ অক্টোবর। সেই মতো মঙ্গলবার এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে চালু হয়ে গেল পাইলট প্রজেক্ট। এদিন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম এ খবর জানিয়েছেন। এদিনই সোনারপুর, বিজয়গড়, বাঘা যতীন এবং বিদ্যাসাগর হাসপাতাল থেকে রোগীরা ‘রেফার্ড’ হয়ে বাঙ্গুরে এলেন এই ব্যবস্থার মাধ্যমে।
কীভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে এই রেফারেল সিস্টেম? সূত্রের খবর, বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে রোজ কতজন ভর্তি আছেন, কতজন ছুটি পেয়েছেন, ক’জনের মৃত্যু হয়েছে, কতগুলি বেড খালি ইত্যাদি যাবতীয় তথ্য ‘আপডেট’ হতে থাকবে। এর জন্য স্বাস্থ্যদপ্তরের হেলথ ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এইচএমআইএস) সফটওয়্যারকে কাজে লাগানো হবে।
এতদিন রোগী ‘রেফার’ করলে একটি ফর্মে লিখে তা রোগীর হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর হাসপাতালে বেডের জোগাড়, চিকিৎসার ব্যবস্থা ইত্যাদি যাবতীয় কাজ করতে হয় রোগী ও তাঁর বাড়ির লোকজনকেই। আর তা করতে গিয়ে দুর্ভোগে নাজেহাল হতে হয় রোগী ও বাড়ির লোকজনকে। নয়া কেন্দ্রীয় ব্যবস্থায় যে কোনও সরকারি হাসপাতালে আসা রোগীকে যদি উপযুক্ত কারণে ‘রেফার’ করতেই হয়, সেক্ষেত্রে কোন হাসপাতালে পাঠালে উপযুক্ত চিকিৎসা মিলবে, তা চিহ্নিত করার পাশাপাশি সেখানে বেড খালি আছে কি না, তাও দেখে নিতে পারবেন ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার। কোথাও বেড খালি থাকলে সেখানে তিনি চিকিৎসার কাগজপত্র অনলাইনে পাঠিয়ে দেবেন। সেই হাসপাতালের চিকিৎসক কাগজ দেখে ‘অ্যাকসেপ্ট’ করলে তৎক্ষণাৎ রোগীকে সেখানে পাঠাতে হবে। হাসপাতালই বেডের ব্যবস্থা করে চিকিৎসা শুরু করবে। ‘রিজেক্ট’ করলে অন্য হাসপাতালে সেই কাগজ পাঠাতে হবে। আর আট ঘণ্টার মধ্যে ‘অ্যাকসেপ্ট’ বা ‘রিজেক্ট’ কোনওটাই না করলে, ‘অটো অ্যাকসেপ্ট’ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে রোগীকে পাঠালে বেডের ব্যবস্থা করে চিকিৎসা শুরু করে দিতে হবে।
রাজ্যের এক বর্ষীয়ান স্বাস্থ্য প্রশাসক জানান, কতগুলি বিষয় চালু করলে নয়া ব্যবস্থা আরও মজবুত হবে। প্রথমত, রেফারেল চেইন মেনে রেফার করতে হবে। ব্লক প্রাথমিক হাসপাতাল থেকে একেবারে মেডিক্যাল কলেজে রেফার ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র ছাড়া করা যাবে না। দ্বিতীয়ত, রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলির যাবতীয় বেডের ৭০-৭৫ শতাংশকে এই সিস্টেমের আওতাভুক্ত করতে হবে। বাকি ২০-২৫ শতাংশ বেড রাখা হোক স্থানীয় রোগীদের জন্য। হঠাৎ বিপদ-আপদে তাঁরা যাবেন কোথায়? তৃতীয়ত, রেফারের কাগজে অবশ্যই উপযুক্ত কারণের উল্লেখ করতে হবে। চতুর্থত, স্থানীয় বা মহকুমা বা জেলা হাসপাতালে কোনও রোগের চিকিৎসা সম্ভব হলে সংশ্লিষ্ট রোগীকে আবার নীচের তলার হাসপাতালে পাঠিয়ে দিতে হবে। সেই সঙ্গে কোন চিকিৎসক বেশি রেফার করছেন, কোন ধরনের রোগী বেশি রেফার হচ্ছে—প্রতি মাসে এসব তথ্য খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।