সুখেন্দু পাল, বর্ধমান: বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোয় ডাক বিভাগের কর্মীদের বোনাস দিল না কেন্দ্র। বাংলার ‘রানার’দের হতাশ করেছে কেন্দ্রের মোদি সরকার। তবে, খুশি করেছে বিহার বা উত্তরপ্রদেশ সহ অন্যান্য রাজ্যের কর্মীদের। ছটের আগেই তাঁরা বোনাস হাতে পেয়ে যাবেন। বাংলার শাসক দলের দাবি, এর পিছনে রয়েছে রাজনীতি। এতেই বোঝা যাচ্ছে, বাংলার প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকৃত মনোভাব কী!
দুর্গোৎসবের আগে সরকারি, বেসরকারি প্রতিটি সংস্থার কর্মীরা বোনাসের দিকে তাকিয়ে থাকে। দ্বাদশী পেরিয়ে গেলেও ডাক বিভাগের কর্মীদের অ্যাকাউন্টে বোনাস ঢোকেনি। গোবলয়ের কর্মীদের খুশি রাখতে তারা ছটের আগে বোনাস ঘোষণা করেছে। কয়েক বছর ধরেই এই প্রবণতা শুরু হয়েছে। ডাক বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, পুজো শেষ হয়ে যাওয়ার পর সোমবার ডাক বিভাগের কর্মীরা বোনাসের মেল পেয়েছেন। কিছুদিনের মধ্যে ৬০দিনের বোনাস কর্মী এবং আধিকারিকদের অ্যাকাউন্টে দেওয়া হবে। পুজোর আগে বোনাস দেওয়ার জন্য ডাক বিভাগের কর্মীদের সংগঠন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকে চিঠি করেছিল। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি।
এক আধিকারিক বলেন, কয়েক বছর ধরেই এই প্রবণতা শুরু হয়েছে। ছট বা দীপাবলির আগে বোনাস দেওয়া হচ্ছে। পরিকল্পনা করেই এমনটা হচ্ছে। প্রত্যেক কর্মীরা পুজোর আগে বোনাসের জন্য অপেক্ষা করে। সম্প্রতি ডাক বিভাগের কর্মীদের কাজের চাপ বাড়ানো হয়েছে। অনেক সময় ছুটির দিনেও কাজ করতে হচ্ছে। নতুন নতুন প্রকল্প ঘোষণা হচ্ছে। কিন্তু কর্মী নিয়োগ হচ্ছে না। বিভিন্ন সংস্থার বোনাস বেড়েছে। কিন্তু ডাক বিভাগের কর্মীদের বোনাস বাড়েনি।
অপর এক আধিকারিক বলেন, ভিন রাজ্যের কর্মী এবং আধিকারিকদের মন জয় করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছটের আগে বোনাস দেওয়া হলে ভিন রাজ্যের কর্মীরা খুশি হয়। সেই কারণেই কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার প্রধান উৎসবের কথা না ভেবে পুজোর পর বোনাস দিচ্ছে। ডাক বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ এরাজ্যের ডাক বিভাগের কর্মীরা। অনেকেরই ধারণা ছিল, ষষ্ঠীর আগেই তাদের কাছে বোনাসের মেল আসবে। তা না পেয়ে তাঁরা ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিলেন। এক কর্মী বলেন, ডাক বিভাগকে আধুনিকীকরণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কর্মীর অভাব থাকায় অনেক প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ছে। কয়েক বছর আগে পোস্ট অফিস থেকে গঙ্গাজল বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। প্রথম বছর তা ভালোভাবে চললেও এখন তা বন্ধের মুখে। একই অবস্থা ‘মাই স্ট্যাপ’ সহ একাধিক প্রকল্প। কর্মীদের পাশে না থাকলে প্রকল্পে সাফল্য পাওয়া সম্ভব নয়।
রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা স্বপন দেবনাথ বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের বাংলার প্রতি বঞ্চনা নতুন কিছু নয়। দুর্গাপুজো বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। সেটা হয়তো ওদের জানা নেই। বাংলার সংস্কৃতি ওরা জানে না। যদিও বিধায়ক তথা বিজেপি নেতা লক্ষ্মণ ঘরুই বলেন, সব জায়গাতেই বোনাস হয়েছে। ডাক বিভাগে কেন হয়নি, তা খোঁজ নিয়ে দেখব। বঞ্চনার অভিযোগ ঠিক নয়।