• আজ সন্ধ্যা থেকে কাল বিকেল পর্যন্ত পূর্ণিমা, আগুন বাজারদরেই আরাধনা মা লক্ষ্মীর
    বর্তমান | ১৬ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: চাল-ডাল-তেল-ফল-আনাজ... হাত দিলেই শিউরে উঠছেন গৌরীবাড়ির সোমা সরকার। সবকিছুর আগুন দাম। দু’-একটি জিনিস কিনতেই সব টাকা শেষ। শ্যামবাজারে দাঁড়িয়েছিলেন। মুখ শুকনো। বললেন, ‘এ বছর ঠাকুরকে ভোগটাও করে দিতে পারব না। নাড়ু আর ফল ছাড়া কিছু কিনতে পারলাম না। মন খুব খারাপ হয়ে গেল।’ তবে তিনি কিন্তু একা নন। ভূপেন অ্যাভিনিউয়ের তনিমা চক্রবর্তী লক্ষ্মীপুজোর বাজার করছিলেন। ঘটের ডাব ও ঝুনো নারকেলের দাম শুনে গেলেন চমকে। এ বছর ডাবের পরিবর্তে কাঁঠালি কলা দিয়েই পুজো সারবেন তিনি। 

    অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে এখন পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে পাচ্ছে না নিম্নবিত্ত। মধ্যবিত্তরা শখের খাবারদাবার থেকে হাত গুটিয়েছে। এবার দামের আঁচ সরাসরি পড়েছে মা লক্ষ্মীর আরাধনাতেও। ধনদেবীকে মনপ্রাণ ভরে খাওয়াতে পর্যন্ত পারছেন না অনেকে। সোমা আর তনিমাদেবী বললেন, ‘সরকারের একটু ভাবা উচিত। আমরা তো এবার না খেতে পেয়ে মারা যাব!’ যদিও আপামর মানুষের বক্তব্য, যেখানে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস পর্যন্ত বলেছেন, ‘মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানা সম্ভব হচ্ছে না,’ সেখানে দাম কমার আশা করা বাতুলতা। তাঁদের অভিযোগ, ‘৫০ টাকার ফল ১৫০ টাকা হয়েছে। কুড়ি টাকার আনাজ ৬০ ছুঁই ছুঁই।’

    বাগবাজার থেকে বাঘাযতীন। মানিকতলা থেকে বরানগর। পাইকপাড়া থেকে গড়িয়া। চুণীবাবুর বাজার থেকে সল্টলেক। সবকিছুর দাম মাত্রাতিরিক্ত। মঙ্গলবার লক্ষ্মীপুজোর জন্য অধিকাংশ মানুষ বিস্তর দরদাম করে দু’একটি মাত্র সব্জি বা ফল কিনলেন। খই, কদমা, গুড়, নারকেল নাড়ুও নিলেন কম পরিমাণে। মানিকতলা বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে কিনছি। আমাদেরও কিছু করার নেই।’

    ‘এবার মন ভরে তোমার পুজোও করতে পারলাম না। অপরাধ নিও না ঠাকুর’—বলতে বলতে অলক্ষ্যে হলেও হয়তো চোখের জল ফেলবেন বহু মধ্যবিত্ত বাড়ির মহিলা। যাদের ভোটে জিতিয়ে সাধারণ মানুষ কেন্দ্রের সরকারে বসিয়েছে, তারা মূল্যবৃদ্ধিকে আজ নিয়তি হিসেবেই চাপিয়ে দিয়েছে মাথায়। সরকারে আর আস্থা নেই। শেষ ভরসা ঈশ্বরই। ‘আসছে বছর মুখ তুলে দেখো ঠাকুর। দাম কমিয়ে দিও একটু’—বাংলার ঘরে ঘরে করজোড়ে প্রার্থনা এবারের লক্ষ্মীপুজোয়।
  • Link to this news (বর্তমান)