• ‘টানা চোখের লক্ষ্মী চাই’, আব্দারে ব্যস্ত কুমোরটুলি
    বর্তমান | ১৬ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আয়ত নেত্র। ঠোঁটে স্মিত হাসি। কমল বরণ। মন জুড়নো মুখশ্রী। ভুবন ভোলানো রূপ মা লক্ষ্মীর। বাংলার প্রতি ঘরে সে মুখের খুব কদর। ফলে বাঙালি মেয়ের সুন্দর মুখের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গিয়েছে ‘লক্ষ্মীশ্রী’ শব্দটি। বাংলার কুমোররা অনেক যত্নে সে মুখ তৈরি করেন। এবছরও কলকাতায় আদি, অকৃত্রিম সেই বাংলা মুখের লক্ষ্মীরই চাহিদা। সাধারণত গোল কিংবা লম্বাটে মুখ-টানা চোখের লক্ষ্মী প্রতিমা বিক্রি হয় বাংলার কুমোরটুলিগুলিতে। কোনওবার গোল মুখের কোনওবার লম্বা মুখের-টানা চোখের প্রতিমার চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এবার টানা চোখের প্রতিমা বিক্রি হচ্ছে বেশি। কুমোরটুলির মৃৎশিল্পী সূত্রে জানা গিয়েছে, এবছর প্রায় ২২ হাজার মূর্তি তৈরি হয়েছে। তার অধিকাংশ টানা চোখের। প্রায় সব বিক্রি হয়ে গিয়েছে। বাকি যা রয়েছে তা আজ এবং আগামী কালের মধ্যে বিক্রি হয়ে যাবে। আজ ও কাল পুজো-ঘরে ঘরে গান বাজছে-‘এস মা লক্ষ্মী বস ঘরে, আমারই ঘরে থাক আলো করে।’ 


    দুর্গা চলে গিয়েছে। মন ভার সকলের। তবে আজ সন্ধ্যায় আকাশে রুপোর থালার মতো পূর্ণিমার চাঁদ উঠবে। তারপর লক্ষ্মী আসবে ঘরে। শুরু পুজো। তারই প্রস্তুতিতে কয়েকদিন নাওয়া খাওয়া ছেড়ে পরিশ্রম করেছে কুমোরটুলি। এবার শুরু হয়েছে খদ্দেরদের ভিড়। কলকাতার ক্রেতারা তো বটেই পাশ্ববর্তী শহরতলি ও জেলা থেকেও আসছেন মানুষ। কিনে নিয়ে যাচ্ছেন টানা চোখের বাংলা মুখের লক্ষ্মী। অধিকাংশ মূর্তি আড়াই থেকে তিন ফুটের। বিক্রি হচ্ছে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায়। মৃৎশিল্পী সংগঠনের অন্যতম কর্তা বাবু পাল বলেন, ‘টানা চোখের বাংলা মুখের লক্ষ্মী প্রতিমারই চাহিদা বেশি। বিক্রি ভালোই হচ্ছে।’


    মঙ্গলবার শিল্পীদের ঘরে ব্যস্ততা চরমে। শিল্পীদের ঘর থেকে নিজের পছন্দমাফিক প্রতিমা কিনে নিয়ে যাচ্ছে ক্রেতারা। দুপুর নাগাদ বনমালি সরকার স্ট্রিটে এক শিল্পীর ঘর থেকে ২ হাজার ৬৫০ টাকা দিয়ে মূর্তি কিনলেন নিউ বারাকপুরের পাল দম্পতি। স্ত্রী রিয়া পাল বললেন, ‘টানা চোখের বাংলা ধাঁচের প্রতিমার মধ্যে আমরা প্রাণ খুঁজে পাই। এ মুখ বড্ড মায়াভরা।’ রবীন্দ্র সরণির এক দোকান থেকে দক্ষিণেশ্বরের বাসিন্দা শুভঙ্কর হাজরাও কিনলেন একই ধাঁচের প্রতিমা। দুপুরে পটুয়াপাড়ায় ঘুরে দেখা গিয়েছে মূর্তির পাশাপাশি লক্ষ্মীর সরাও বিক্রি হচ্ছে। কোনওটায় পটের ধাঁচে আঁকা লক্ষ্মী। কোনওটায় ধানের শিস। কোনওটায় ধানের গোলার মাথায় বসা পেঁচার ছবি। সেগুলি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দাম। বাগুইআটির বাসিন্দা কল্পনা জানা কিনলেন। তারপর বললেন, ‘আমাদের বাড়িতে একটানা ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পটের সরায় লক্ষ্ণী পুজো হয়। প্রতিবছরই আসি কুমোরটুলিতে। সরা কিনে নিয়ে যাই। এখান থেকে কেনার মধ্যে নস্টালজিয়া জড়িয়ে। বাবার সঙ্গে আসতাম ছোটবেলায়।’ উত্তর কলকাতার নাথেরবাগান স্ট্রিটের বাসিন্দা তপন ঘোষাল পাশে দাঁড়িয়ে কিনছিলেন। তিনিও বললেন, ‘দাদুর কাছ থেকে শুনেছি ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের বাড়িতে লক্ষ্মীর পটে পুজো হ঩য়। পুজোর পর সরা এক বছর রেখে দিতে হয়। জলফুল দিয়ে নিত্য পুজো দেওয়ার নিয়ম। এক বছর পর সে সরা গঙ্গায় ভাসিয়ে দি আমরা।’
  • Link to this news (বর্তমান)