সংবাদদাতা, বারুইপুর, বনগাঁ: দুর্গাপুজোর আগে একটানা বৃষ্টিতে ফুলগাছে, এমনকী ফুলেও পচন ধরেছিল। শেষ পর্যন্ত কতটা ফুল নিয়ে বাজারে আসতে পারবেন, তা নিয়েই চিন্তায় পড়েছিলেন ফুলচাষিরা। কিন্তু লক্ষ্মীপুজোর আগে অন্য ছবি। পুজোর কয়েকদিন আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলন বেড়েছে। কিন্তু এর দু’রকম প্রভাব দেখা যাচ্ছে বাজারে। বনগাঁর ঠাকুরনগর বাজারের মতো কোথাও জোগান বেড়ে গিয়ে ফুলের দাম কমে গিয়েছে। ফলে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের মুখ ভার। আবার ভাঙড়ের মতো জায়গায় ফুলের ভালোই দাম পেয়েছেন কৃষকরা। যে ফুলের মালা সাধারণত পাঁচ থেকে সাত টাকা পিস হিসেবে বিক্রি হতো, সেই মালাই বিক্রি হয়েছে তিনগুণ দরে।
উপযুক্ত পরিবেশ আর উর্বর মাটির জন্য ভাঙড়ের কচুয়া, চাঁদামারি, রাজাপুর, পাখিমারা, শানপুকুর, রঘুনাথপুর, বানিয়াড়া গ্রামে বিঘার পর বিঘা জমিতে ফুলচাষ হয়। ক্যানিং পূর্বের বোদরা, শাকশহর, চন্দনেশ্বর এলাকায় এখন মাঠ ভর্তি গাঁদাফুল। লক্ষ্মীপুজোয় সেই ফুল ফড়েদের হাত ধরে হাওড়ার মল্লিকহাট, শিয়ালদহ বাজার সহ অন্য জায়গায় যায়। শিখরপুরের কৃষক স্বপন নস্কর বলেন, লক্ষ্মীপুজোর আগে লাল গাঁদা বিক্রি হল তিনশো থেকে চারশো টাকা দরে। বাসন্তী রঙের গাঁদার দাম ৫০০ টাকা। বুধবার এই দাম আরও বাড়বে। ভাঙড়ের অসীম রায়, বালিয়াড়া গ্রামের ফুলচাষি কৃষ্ণপদ মণ্ডলরা বলেন, স্বাধীনতা দিবস ও জন্মাষ্টমীতে পাইকারিতে এক-একটি মালার দাম ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। কিন্তু বিশ্বকর্মা পুজোর পরে লাগাতার বৃষ্টি হওয়ায় ফুলে পচন ধরেছিল। ভালো দাম পাইনি। এখন আবার ভালো ফলন হওয়ায় লাভের মুখ দেখছি। ভাঙড় ২ নম্বর ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ তুহিনা বিবি বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকায় আপাতত খুশি ফুলচাষিরা।
তবে বনগাঁয় অন্য ছবি। প্রাক পুজোয় অতিবৃষ্টিতে বনগাঁ মহকুমায় ফুলচাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। কিন্তু এখন ফুলের বাম্পার জোগান। এজন্য ফুলের দামও কমেছে। ফলন ভালো হলেও উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় কৃষকদের মন খারাপ। কৃষক ও ব্যবসায়ীদের দাবি, স্থানীয় কৃষকদের পাশাপাশি নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহের অনেক কৃষক ফুল ঠাকুরনগর বাজারে আনছেন। ফলে জোগান আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রতিবছর লক্ষ্মীপুজোর আগে ফুলের বাজারে আগুন লাগে। এবার উল্টো ছবি রাজ্যের অন্যতম ঠাকুরনগর ফুলবাজারে। মঙ্গলবার বাজারে গিয়ে দেখা গেল প্রচুর কৃষক বাজারে এসেছেন ফুল নিয়ে। তবে দাম ছিল অনেকটাই কম। এদিন গাঁদা ফুল ৩০-৪০ টাকা প্রতি কিলো দরে বিক্রি হয়েছে, যা অন্যান্য বছরের তুলনায় খুবই কম। রজনীগন্ধা প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, দোপাটি ২৫০-২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। পদ্মফুল ১৫-২০ টাকা প্রতি পিস হিসেবে বিক্রি হয়েছে। লক্ষ্মীপুজোয় অপরিহার্য টুনি ফুলের দামও এদিন কম ছিল। প্রতি আটি ৩০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হয়েছে। গোপালনগরের এক ফুলচাষি বিষ্ণুপদ দে বলেন, এবারের মত মন্দা কোনওবার হয়নি। জোগান বেশি হওয়ায় ফুলের দামই পাওয়া যাচ্ছে না।
গাইঘাটার শসাডাঙার বাসিন্দা সুব্রত বিশ্বাস বলেন, অন্যান্য বছর দাম চড়া থাকে। এবছর আশা করেছিলাম লক্ষ্মীপুজোর আগে গাঁদা ফুলের দাম দুশো টাকার কাছাকাছি থাকবে। কিন্তু জোগান বেশি হওয়ায় দাম তলানিতে ঠেকেছে।