• বন্যাবিধ্বস্ত এলাকা থেকে পিজিতে এসে ভোগান্তির শিকার অসুস্থ বৃদ্ধ   
    বর্তমান | ১৬ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: একদিকে যখন ডাক্তারবাবুরা দ্রোহ কার্নিভালে নাচে, গানে মেতেছেন, ঠিক সেই সময় বন্যাবিধ্বস্ত এলাকা থেকে এসে এক বৃদ্ধ এসএসকেএমে ভোগান্তির শিকার হলেন। অসহায় অবস্থায় জরুরি বিভাগের সামনে স্ট্রেচারে শুয়ে রইলেন। শুধু তাই নয়, নিজের সমস্যার কথা বলতে বলতে অসংলগ্ন কথা বলতে শুরু করলেন। 

    হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের বাসিন্দা নেপাল হামবিল (৬৮) অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী। তাঁর মেয়ে শর্বরী মণ্ডল বলছিলেন, ‘আমাদের বাড়ি বন্যায় ভেসে গিয়েছে। সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পড়ে মাথায় চোট লাগে বাবার।’ এরপর স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু কোনও উন্নতি হয়নি। এরপর রবিবার তাঁরা প্রথম এসএসকেএমে আসেন। শর্বরী বলেন, ‘সেদিন জরুরি বিভাগে দেখাই। সোমবার ওপিডিতে আসতে বলা হল। এসে দেখালাম। আবার রিপোর্ট করতে বলল। আজকে ফের রিপোর্ট করে এলাম। ভর্তির কথা বললে বলছে অমুক বিল্ডিংয়ে যেতে। এখানে কোনও ডাক্তার কথাই বলছেন না।’ এদিনই তাঁরা সাড়ে চার হাজার টাকা অ্যাম্বুলেন্স খরচ করে এসেছেন। বৃদ্ধ তখনও অসংলগ্ন কথা বলে চলেছেন। রোগী বলছেন, ‘ডাক্তারদের দাবি থাকতেই পারে। তাহলে আমাদের দিকটা কে দেখবে?’ এদিকে হাসপাতাল থেকে কাগজে রেফার করে দেওয়া হয়েছে।

    অন্যদিকে, একই সমস্যায় পড়েছেন ডোমকলের মনিরুল ইসলাম মণ্ডল। তাঁর স্ত্রী বলছিলেন, ৮ হাজার টাকা নিয়েছে অ্যাম্বুলেন্স। রাজমিস্ত্রির কাজ করেন মনিরুল। দুর্ঘটনায় মেরুদণ্ড ভেঙে যায়। অনেক হাসপাতাল ঘুরে এদিনই প্রথম এসএসকেএমে এসেছিলেন তাঁরা। রোগীর আত্মীয়ের অভিযোগ, ভর্তি কিছুতেই নিচ্ছে না। শুধু ওষুধ দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে। কোথায় যাব আমরা?

    এদিন সকালে অর্থোপেডিক ওপিডিতে লম্বা লাইন দেখা যায়। এক নিরাপত্তা রক্ষী বলেন, চারজন জুনিয়র চিকিৎসক দেখছেন। বলে দিয়েছেন, ২টো ১ হলে আর দেখবেন না। এদিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোকজন দাঁড়িয়ে আছেন লাইনে। গরিব মানুষরা দ্রোহ বোঝেন না। দ্রোহের উৎসব কাকে বলে জানেন না। মুর্শিদাবাদের এক রোগী বলছিলেন, ‘পায়ে খুব ব্যথা। হাঁটতে পারি না। কাজ করতে পারি না। শহরে এলাম ডাক্তার দেখাতে। অত কিছু তো বুঝি না। ডাক্তার দেখাতে পারলেই হল।’ তাঁদের কষ্ট, যন্ত্রণা আর আর্তি বোধহয় চাপা পড়ে গেল দ্রোহ কার্নিভালের উল্লাসে!
  • Link to this news (বর্তমান)