সাত লক্ষ পিৎজ়া, ১৫ লক্ষ বিরিয়ানি! প্রকাশ্যে পুজোর সেলস রিপোর্ট
এই সময় | ১৬ অক্টোবর ২০২৪
কুবলয় বন্দ্যোপাধ্যায়
ধর্ম এবং জিরাফের মতো বিরিয়ানি ও পিৎজ়া — দু’দিকেই আছে কলকাতা। পুজো তিন দিনের না পাঁচ দিনের, পঞ্জিকার অঙ্ক ভুলে দুর্গোৎসবের ষষ্ঠী থেকে দশমী অফলাইন ও অনলাইন মিলিয়ে কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায় বিক্রি হয়েছে ৭ লক্ষ পিৎজ়া! শুধু সেলস রিপোর্টে চোখ না রেখে স্কুলে পড়া পরিমিতির হিসেব কষলে দেখা যাবে, ওই ৭ লক্ষ মিডিয়াম সাইজ় পিৎজ়া পাশাপাশি রাখলে ঢাকা পড়ে যাবে গোটা ইডেন গার্ডেন্স।তবে সেই অঙ্কের বাইরে উঁকি দিচ্ছে একটা ধাঁধা। জাঙ্ক ফুড হোক বা ফাস্ট ফুড— ফ্রায়েড রাইস-চিলি চিকেন বা নুডলসকে সরিয়ে পুজোর দিনে শহরের ভোজনরসিকদের পছন্দের তালিকায় দু’নম্বরে পিৎজ়ার উঠে আসা কি কলকাতার স্বাদবদলের ইঙ্গিত দিচ্ছে? কিছুটা হয়তো, পুরোটা নয়। রসনাবিলাসীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে গত কয়েক বছর যা ছিল, এ বারও সেটাই আছে। পুজোর কলকাতা বিরিয়ানিময়।
বিভিন্ন অনলাইন ফুড ডেলিভারি ও পিৎজ়া প্রস্তুতকারক সংস্থার প্রাথমিক হিসেব বলছে, ২০২৪-এর পুজোয় কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় অনলাইন ও অফলাইন মিলিয়ে প্রায় ১৫ লক্ষ প্লেট বিরিয়ানি বিক্রি হয়েছে। এটা যে এ বছরের ‘ক্রেজ়’, তা কিন্তু নয়। মহানগরের বিরিয়ানি প্রেমই এমন। ২০২২-২৩-এর একটা সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী, সে বার কলকাতায় সারা বছরে বিক্রি হয়েছিল প্রায় ৪১ লক্ষ প্লেট বিরিয়ানি। তবু তার পাশে যে পিৎজ়ার বিক্রিও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে, চলতি বছরের পুজো তা ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝিয়ে দিয়েছে।
চিকেন বা মাটন — বিরিয়ানিতে একটা আলু আর একটা ডিম। নবাব ওয়াজ়িদ আলি শাহের সঙ্গে লখনউ থেকে কলকাতায় আসার পর নবাবি এই ডিশের এইটুকু পরিবর্তন করে নিয়েছে বাঙালি। আর তাতেই কেল্লা ফতে। ব্যারাকপুরের বিখ্যাত ‘দাদা-বৌদি’ বিরিয়ানির কর্ণধার সঞ্জীব সাউ বলছেন, ‘পুজোয় যাঁরা ব্যারাকপুরে এসেছেন, তাঁদের একটা বড় অংশই আসেন বিরিয়ানি খেতে। এটা অবশ্যই আমাদের কাছে খুবই গর্বের।’ বিরিয়ানির চাহিদা কত ছিল?
সঞ্জীব বলছেন, ‘দিনে গড়ে ৭৫ থেকে ৮০ হাঁড়ি বিরিয়ানি নামত। এক একটা হাঁড়ি ১০০ প্লেট বিরিয়ানির।’ দক্ষিণ কলকাতার জনপ্রিয় বিরিয়ানি জয়েন্ট ‘হ্যাংলাথেরিয়াম’-এর তরফে পিয়ালি বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘যদি পুজো অন্য বছরের মতো পুরোদস্তুর আনন্দের পরিবেশে কাটত, তা হলে আরও বেশি বিরিয়ানি বিক্রি হতো। এ বছর তুলনায় কম। রোজ গড়ে ২০০ প্লেট বিরিয়ানি বিক্রি হয়েছে।’
কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন অনলাইন ফুড ডেলিভারি সংস্থার হিসেব বলছে, পঞ্চমী থেকে দশমী — পুজোর এই ক’দিনে ডেলিভারি পার্সনরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় ২০ লক্ষ অর্ডার ডেলিভারি দিয়েছেন। দিনে বিশ্রামের সুযোগ ছিল মাত্র কয়েক ঘণ্টা। প্রাথমিক হিসেবে গত বছরের তুলনায় এ বার পুজোয় কলকাতায় অনলাইন ফুড ডেলিভারির ব্যবসা প্রায় ৭.৮% বেড়েছে। সকালে লুচি, আলুর দম, পায়েস থেকে ইডলি-সম্বর-ধোসা বা স্যান্ডউইচ দিয়ে অর্ডার শুরু। দুপুরে ও রাতে বিরিয়ানি, স্টিমড রাইস-কষা মাংস, মোগলাই পরোটা, ফ্রায়েড রাইস-চিলি চিকেন এবং অন্য নানা কম্বো চলেছে শহরে। তবে খাবার এত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যেও পছন্দের নিরিখে বিরিয়ানি ‘ফার অ্যাহেড’।
১৮৫৬ সালে অযোধ্যার নবাব ওয়াজ়িদ আলি শাহ চিরকালের জন্য লখনউ ছেড়ে কলকাতায় মেটিয়াবুরুজে আসেন। সঙ্গে এনেছিলেন লখনউয়ের তেহজ়িব এবং বহু রকমের খাবারের রেসিপি। তারই অন্যতম ছিল দম পোক্ত বিরিয়ানি। পরের দেড়শো বছরে নবাবি ওই খানার কিছু পরিবর্তন করে বাঙালিরা তাকে একেবারে কলকাত্তাই করে নিয়েছেন। তাই পুজোয় মাত্র ৫ দিনেই দিব্যি উড়ে যায় ১৫ লক্ষ প্লেট।