আন্দোলনকারীদের দশ দফা দাবি বিধানসভায় তুলতে চান শুভেন্দু
এই সময় | ১৬ অক্টোবর ২০২৪
মণিপুস্পক সেনগুপ্ত
জুনিয়র চিকিৎসকদের দশ দফা দাবি এ বার বিধানসভায় উত্থাপন করতে চান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সে জন্য জরুরি ভিত্তিতে বিধানসভা অধিবেশন ডাকার দাবিও তুললেন তিনি। মঙ্গলবার ‘বয়কট কার্নিভাল’-এর মিছিল শেষে শুভেন্দু বলেন, ‘ডাক্তারবাবুদের আন্দোলনের পাশে আমরা আছি। জুনিয়র ডক্টরদের হ্যাটস অফ। ওঁদের দশ দফা দাবি পূরণ করতে হবে। সে কারণে বিধানসভা অধিবেশন ডেকে আলোচনার দাবি জানাচ্ছি।’রাজ্য সরকারের ‘পুজো কার্নিভাল’-এর প্রতিবাদে এ দিন ধর্মতলা চত্বরের রানি রাসমণি অ্যাভিনিউতে ‘দ্রোহের কার্নিভাল’-পালন করেন চিকিৎসকদের একাংশ। সরাসরি তাতে সামিল হতে চাননি শুভেন্দুরা। তাই সোমবার বীরভূমের সিউড়িতে সাংবাদিক বৈঠক করে কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত ‘বয়কট কার্নিভাল’ মিছিলের ডাক দেন তিনি। সেখানে সকলকে দলীয় পতাকা ছাড়া যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু শুভেন্দুদের ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করার ছাড়পত্র দেয়নি কলকাতা পুলিশ। তাই নিয়ম মেনে মঙ্গলবার সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার পর্যন্ত মিছিল করেন তাঁরা।
সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিজেপি কর্মীদেরও এই মিছিলে হাঁটতে দেখা যায়। শুভেন্দু অধিকারী এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বহু বিজেপি বিধায়ক প্রতিবাদ মিছিলে হাজির ছিলেন দলীয় পতাকা ছাড়াই। ছিলেন ব্যারাকপুরের বিজেপি নেতা অর্জুন সিং-ও। তবে সুকান্ত মজুমদার, দিলীপ ঘোষ, লকেট চট্টোপাধ্যায়, অগ্নিমিত্রা পলের মতো বঙ্গ-বিজেপির পরিচিত বহু মুখকেই এ দিনের মিছিলে হাঁটতে দেখা যায়নি। সূত্রের খবর, তাঁরা এ দিন সল্টলেকে দলের রাজ্য দপ্তরে সাংগঠনিক বৈঠকে ব্যস্ত ছিলেন।
আরজি কর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির পাশাপাশি পথে নেমেছে নাগরিক সমাজও। তবে শুরু থেকেই এই আন্দোলনে সেভাবে দাঁত ফোটাতে পারেনি রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। বরং গত দু’মাসে রাজপথের আন্দোলনে বিজেপির থেকে অনেকটা এগিয়ে বামপন্থীরা-ই। রাজনৈতিক মহলের মতে, আন্দোলনের রাশ নিজেদের হাতে নিতে বামশূন্য বিধানসভাকে তাই বেছে নিয়েছেন শুভেন্দুরা। সেখানে জুনিয়র ডাক্তারদের দশ দফা দাবি নিয়ে রাজ্য সরকারের উপর চাপ তৈরি করে বিরোধী শক্তি হিসেবে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা পোক্ত করতে চাইছে বিজেপি।
শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘সাধারণ নাগরিক সেজে সিপিএম আরজি কর আন্দোলনে ঢুকে পড়েছে। আমাদের দেখলে ওরাই গো ব্যাক স্লোগান তুলছে। বিধানসভায় সিপিএম নেই। সেখানে আমরা একমাত্র বিরোধী। ওই প্ল্যাটফর্মটা আমাদের ব্যবহার করতে হবে।’
এ দিনও বামেদের খোঁচা দিতে ছাড়েননি শুভেন্দু। মিছিল শেষে তিনি বলেন, ‘সেকু-মাকুরা কিছু করবে না। ওরা বিরোধী ভোট কেটে তৃণমূলের সুবিধা করে দেয়। এটাই ওদের কাজ। যা করার আমরা করব।’
আরজি কর আন্দোলনের আঁচ কলকাতার বাইরে গ্রামগঞ্জে কতটা পড়েছে তা নিয়ে অবশ্য যথেষ্ট সংশয় রয়েছে বিরোধীদের। বিজেপির সংগঠন শহর কলকাতার থেকে তুলনায় বেশি শক্তিশালী জেলাগুলিতে। শুভেন্দুরা চাইছেন, এই আন্দোলন জেলাস্তর ছড়িয়ে শাসকের উপর চাপ বাড়াতে। সেই বার্তা দিয়ে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা এ দিন বলেন, ‘আজ ব্যারাকপুর থেকে যাদবপুরের মানুষ পথে নেমেছে। এ বার দিঘা থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়বে।’