এই সময়: ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন মঞ্চের সামনে গড়ে ওঠা মানববন্ধন থেকে বিক্ষোভের মুখে পড়লেন কলকাতা পুলিশের ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই মানববন্ধনের ডাক দিয়েছিলেন আন্দলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা। সেই হিউম্যান চেন ছড়িয়ে পড়ে মেট্রো চ্যানেলের সামনে থেকে বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট ও লেনিন সরণির সংযোগস্থলে টিপু সুলতান মসজিদের দিকে এবং অন্যদিকে ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত।সেই সময়ে টিপু সুলতান মসজিদের সামনে ইন্দিরা বিক্ষোভের মুখে পড়েন। আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের খুন-ধর্ষণের পরে ক্রাইম সিনে অনেকের উপস্থিতি ঘিরে তাঁর মন্তব্য বিতর্ক ও ক্ষোভ তৈরি করেছিল জনমানসে। এদিন মানববন্ধন থেকে ছিটকে বেরিয়ে কিছু প্রতিবাদী একপ্রকার তাঁকে তাড়া করলে র্যাফ পুলিশ কর্তাকে উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যায়।
১০ দফা দাবিতে জুনিয়র ডাক্তারদের আমরণ অনশন চলছে ধর্মতলা এবং শিলিগুড়িতে। কলকাতায় মঙ্গলবার সেই অনশন মঞ্চে যোগ দেন অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথের কমিউনিটি মেডিসিন পিজিটি রুমেলিকা কুমার এবং মেদিনীপুর মেডিক্যালের জেনারেল মেডিসিন পিজিটি স্পন্দন চৌধুরী। ফলে অনশনকারীদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট জনে।
ধর্মতলার মঞ্চে তাঁদের সঙ্গেই রয়েছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের স্নিগ্ধা হাজরা, এসএসকেএমের অর্ণব মুখোপাধ্যায়, কেপিসি-র সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা, বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেসের পরিচয় পণ্ডা ও ন্যাশনালের আলোলিকা ঘোড়ুই। আর উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে আমরণ অনশন করছেন সেখানকার পিজিটি সন্দীপ মণ্ডল। সোমবার অনশনরত উত্তরবঙ্গ ডেন্টালের ইন্টার্ন সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর রক্তচাপ ওঠা-নামা করছিল। এ দিন সৌভিকের শারীরিক অবস্থার সামান্য অবনতি হওয়ায় তাঁকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তর করতে হয়।
এদিকে, জুনিয়র ডাক্তারদের ১০ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম যে কেন্দ্রীয় রেফারেল ব্যবস্থার কথা বলা ছিল, সেই ব্যবস্থা এ দিন পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। এর আগেই জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠকে ১৫ অক্টোবর থেকে এই ব্যবস্থা চালু হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। সেইমতো পাইলট প্রকল্প হিসেবে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা এবং ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলায় কেন্দ্রীয় রেফারেল ব্যবস্থা চালু হলো।
ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ, এমআর বাঙুর হাসপাতাল, ন্যাশনাল মেডিক্যাল এবং এসএসকেএম-কে আপাতত এই রেফারড হাসপাতালের তালিকায় সংযোজন করা হয়েছে। সাফল্য মিললে আগামী দিনে এই ব্যবস্থাই চালু হবে রাজ্যজুড়ে। যদিও আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিস হালদার বলেন, ‘চালু হচ্ছে, ভালো কথা। আমরা নজর রাখছি। শুনেছি, আমাদের প্রস্তাব মেনে বাস্তবসম্মত ভাবে এই ব্যবস্থা নাকি চালু হয়নি। তবে এই রেফারেল ব্যবস্থা চালানোর দায়িত্ব চিকিৎসকদের নয়, অন্য আধিকারিককে দিতে হবে। নাহলে সাফল্য পাওয়া মুশকিল।’
কী ভাবে কাজ করবে সেন্ট্রাল রেফারেল সিস্টেম?এই ব্যবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে কত বেড খালি রয়েছে, তা জানতে পারবেন চিকিৎসকরা। ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে টাইপ-এ, অর্থাৎ মহকুমা হাসপাতাল, সুপার-স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, স্টেট জেনারেল হাসপাতালে রোগীদের রেফার করা যাবে। টাইপ-বি রেফারড হাসপাতালগুলি হলো জেলা হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলি। ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে অধিকাংশ সময়ে টাইপ-এ হাসপাতালগুলিতে এবং বিশেষ প্রয়োজনে সরাসরি টাইপ বি স্তরের হাসপাতালগুলিতেও রেফার করা হবে রোগীদের।