গ্রামের নাম ধর্মডাঙা। তবে ধর্মের চেয়ে এখানে উৎসবকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে এসেছেন গ্রামের মানুষ। গ্রামের প্রধান উৎসব লক্ষ্মীপুজো। সেই পুজোয় শুধু হিন্দুরা নন সামিল হন মুসলমানরাও। পুজোর প্রস্তুতিতে তন্ময়, বাপন, সুশান্তদের সঙ্গে যোগ দেন গ্রামেরই বাসিন্দা আবু, ইরফান, ইনসানরা। কালনা শহর লাগোয়া ধর্মডাঙা গ্রামে এটাই দীর্ঘদিনের পরম্পরা, যেখানে লক্ষ্মীপুজোয় যেমন সক্রিয় ভাবে অংশ নেন মুসলমানরা তেমনই ঈদে অংশ নেন হিন্দুরা।দুর্গা বা সরস্বতী নয়, ধর্মডাঙায় লক্ষ্মীপুজোই বড় উৎসব। পুজো চলে চার দিন ধরে। পুজোর আগের দিন থেকেই সাজো সাজো রব গ্রামে। প্রতি বাড়িতে চলে আসেন আত্মীয়রা। গ্রামের স্কুলের সামনেই পুজো পল্লিশ্রী সঙ্ঘের। এ বার প্রতিমার উচ্চতা ১৫ ফুটের মতো। মণ্ডপ তৈরিতে হাত মেলান আবু শেখ, ইনসান শেখরা। পুজোর ওই চার দিন তাঁদের সকলেরই ঠিকানা লক্ষ্মীমণ্ডপ। একসঙ্গে পাত পেড়ে খাওয়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সবেতেই সামিল হন তাঁরা। চাঁদা তোলেন, পুজোর বাজারেও সক্রিয় ভাবে অংশ নেন।
ইনসান শেখ বলেন, ‘পুজোর কটা দিন অন্য কোনও কাজ রাখি না। চাঁদা তোলা থেকে প্রতিমা নিয়ে আসা অনেক কাজ থাকে। মাইকের ব্যাপারটা দেখার দায়িত্ব থাকে আমার উপর। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মাইক যাতে ঠিকঠাক চলে তার খেয়াল রাখতে হয় আমাকে।’ আবু শেখের বক্তব্য, ‘মণ্ডপ চত্বর সাফাইয়ের কাজটা বাকি ছিল। সেটা সেরে নিলাম। এটাই এই গ্রামের পরম্পরা। এই গ্রামে ধর্ম নয় মানুষই সত্য।’
ইরফান, সুশান্তদের কথায়, কোথাও ধর্মে ধর্মে বিভেদের কথা শুনলে তাঁদের হাসি পায়। ইরফান বলেন, ‘যারা এমন করে তাদের নির্বোধ ছাড়া অন্য কিছুই মনে হয় না। আমরা যেমন লক্ষ্মীপুজোয় অংশ নিই তেমনই ঈদ বা আমাদের অন্য পরবে সমান ভাবে অংশ নেয় রিপন, বাপনরা।’ পল্লিশ্রী সঙ্ঘের সভাপতি রিপন মণ্ডল বলেন, ‘এখানে হিন্দু, মুসলমান বলে কোনও ভেদাভেদ নেই। অঞ্জলি ছাড়া বাকি সব যেমন চাঁদা তোলা, প্রতিমা আনা, পুজোর বাজার সব কিছুতে সক্রিয় ভাবে অংশ নেয় ওরা।’
সম্পাদক তন্ময় দাস জানান, পাশেই মুসলিমপাড়া। তাই বছরভর মিলেমিশে থাকেন তাঁরা। বলেন, ‘বহু জায়গায় দ্বন্দ্বের কথা শোনা যায়। কিন্তু, আমরা একসঙ্গে থাকতে ভালবাসি।’ গ্রামের এক মুসলমান বধূর বক্তব্য, ‘লক্ষ্মীপুজোয় কখনই মনে হয় না আমরা ভিন্ন সম্প্রদায়ের। পুজোর দিনগুলোয় বেশির ভাগ সময়টাই কাটে মণ্ডপে। সবাই একসঙ্গে বসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখি রাতভর।’