নেই শৌচালয়ের বন্দোবস্ত, চরম দুর্ভোগ মহিলা ট্রেন-চালকদের
এই সময় | ১৬ অক্টোবর ২০২৪
তাপস প্রামাণিক
ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাঁরা দাঁড়িয়ে ডিউটি করেন। তবে তাঁদের কাজের সুস্থ পরিবেশের ন্যূনতম শর্ত, একটা শৌচাগার পর্যন্ত নেই। এই নেই-তালিকায় রয়েছে পানীয় জল, ফ্যানও। তার মধ্যেই নাগাড়ে ১০-১২ ঘণ্টা ইঞ্জিন রুমে থাকতে হয় তাঁদের। দিনের পর দিন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করার ফলে শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে ভেঙে পড়ছেন মেল-এক্সপ্রেস কিংবা মালগাড়ির মহিলা লোকো পাইলটরা।ঘণ্টার পর ঘণ্টা শৌচালয় ব্যবহারের সুযোগ না-থাকায় তাঁদের মধ্যে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই) বাড়ছে। এমনকী গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে মিসক্যারেজের ঘটনাও ঘটছে। এই সমস্যার কথা জানিয়ে সম্প্রতি রেল বোর্ডকে দিয়েছে অল ইন্ডিয়া রেলওয়েমেন ফেডারেশন।
আরজি করে এক মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় তোলপাড় গোটা দেশ। মহিলা চিকিৎসকরা যাতে হাসপাতালে নিরাপদে কাজ করতে পারেন, তার জন্য বিশ্রামকক্ষ, পৃথক শৌচালয় তৈরি, পর্যাপ্ত আলো ও সিসিটিভি লাগানো, নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন-সহ একগুচ্ছ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় স্পষ্ট জানিয়েছেন, মেয়েদের রাতে ডিউটি দেওয়া যাবে না, কাজের ক্ষেত্রে এমন বৈষম্য তাঁরা চান না। তবে তাঁরা চান, কর্মস্থলে সমান দক্ষতায় কাজের জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো। রেলের ক্ষেত্রে কেন এই পরিকাঠামো নেই, তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠছে।
রেলের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, একটা সময় পর্যন্ত রেলের লোকো পাইলটের (ট্রেনের চালক) চাকরি করতেন মূলত পুরুষরাই। গত এক-দেশ দশকে লোকো পাইলট বা অ্যাসিস্ট্যান্ট লোকো পাইলটের ডিউটিতে মহিলাদের আসার প্রবণতা অনেক বেড়েছে। তবে তাঁদের জন্য আলাদা পরিকাঠামো এখনও সে ভাবে তৈরি হয়নি। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের এক শীর্ষকর্তার ব্যাখ্যা, ‘লোকো পাইলট এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট লোকো পাইলটদের সর্বক্ষণ ইঞ্জিন রুমে থাকতে হয়। জায়গাটা সঙ্কীর্ণ হওয়ায় সেখানে শৌচাগার বানানো যায় না। এঁদের ডিউটির সময়েরও কোনও ঠিক-ঠিকানা থাকে না। তাতেই সমস্যা বাড়ছে।’
সাঁতরাগাছির এক মহিলা লোকো পাইলট জানাচ্ছেন, বিয়ের পর তাঁর তিন বার মিসক্যারেজ হয়েছে। তার আগে একাধিক বার ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনও হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ সময় শৌচালয়ে যেতে না পারা এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপেই তাঁর বারবার মিসক্যারেজ হচ্ছে। ওই লোকো পাইলটের আক্ষেপ, ‘পরিবারের কথা ভেবে হয়তো আমাকে চাকরিটাই ছেড়ে দিতে হবে।’ মহিলা লোকো পাইলটদের নিরাপত্তা নিয়েও রেলবোর্ডের কাছে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে অল ইন্ডিয়া রেলওয়েমেন ফেডারেশন।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের এক মহিলা লোকো পাইলট বলেন, ‘রাতে ডিউটি দিলে মহিলা লোকো পাইলটদের সঙ্গে একজন করে মহিলা আরপিএফ দেওয়ার কথা। সেই নিয়মও মানা হচ্ছে না। পুরুষদের মতো মহিলা লোকো পাইলটদেরও অনেক সময়ে জনমানবহীন জায়গায় ইঞ্জিন থেকে নেমে ইনস্পেকশন করতে হয়। তখন তাঁদের সঙ্গে কেউ থাকে না। ফলে মাঝপথে ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকলে ইঞ্জিনে দুষ্কৃতী হানার ঘটনাও ঘটে।’
দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ে মজদুর ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট এবং ইন্ডিয়ান রেলওয়েজ এমপ্লয়িজ় ফেডারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট নীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘খড়্গপুর ডিভিশনে তিনজন মহিলা লোকো পাইলট এবং ২০ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট লোকো পাইলট আছেন। তাঁদের জন্য খড়্গপুরে রানিংরুমে কোনও আলাদা ঘর নেই। সে জন্য কাজ শেষ করে অনেক রাতে তাঁদের ট্রেন ধরে বাড়ি ফিরতে হয়। তখন তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা তো থাকেই।’