এক বছরে একটি শিশুকেও পালনের দায়িত্ব পেল না ‘পালনা’!
এই সময় | ১৬ অক্টোবর ২০২৪
এই সময়, মেদিনীপুর: রীতিমতো শোরগোল ফেলে শুরু হয়েছিল ‘পালনা’ প্রোজেক্ট। কিন্তু সে ভাবে সাফল্যের মুখ দেখতে পারল কোথায়! কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ল প্রশাসনের এই প্রকল্প।পরীক্ষামূলক ভাবে জেলার চারটি হাসপাতাল চত্বর ও একটি হোমের সামনে মোট পাঁচটি ‘পালনা’ গুমটি রাখা হয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরে। গুমটিগুলিতে রাখা ছিল দোলনা। উদ্দেশ্য — যে সব শিশু বাড়ির লোকের কাছে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’, তাদের ঝোপঝাড়ে-পথের ধারে না ফেলে, রাখা হোক ওই দোলনায়। সেখানে শিশু রাখা হলেই অ্যালার্মের মাধ্যমে সতর্ক করা হতো নার্সদের। তাঁরা শিশুদের প্রাথমিক দেখভাল, চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার পর তাদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার ভার নিত প্রশাসন। অথচ বছর ঘুরে গেলেও একটি শিশুকেও পালনা প্রকল্পে রেখে যাননি কেউ।
কেন শুরু হয়েছিল এই প্রকল্প?
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের বক্তব্য ছিল, অনেক সময়েই শিশুদের ঝোপঝাড়ে, পথে বা ডাস্টবিনে ফেলে যায় বাড়ির লোক। পরিত্যক্ত এমন সদ্যোজাতদের উদ্ধারের ঘটনা নেহাত কম ঘটে না। তাদেরই শেল্টারের স্বার্থে ‘পালনা’র সূচনা। পরীক্ষামূলক ভাবে মেদিনীপুর মেডিক্যাল, খড়্গপুর মহকুমা, ঘাটাল মহকুমা এবং চন্দ্রকোণা গ্রামীণ হাসপাতাল ও বিদ্যাসাগর বালিকা ভবন হোমের সামনে বসানো হয়েছিল গুমটি।
গত বছর ২৮শে সেপ্টেম্বর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সেগুলির উদ্বোধন করেন জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরি। জেলা প্রশাসন জানিয়েছিল, ভবিষ্যতে গুমটির সংখ্যা বাড়ানো হবে। জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল ও নার্সিংহোম চত্বরে রাখা হবে সেগুলি।
বছর ঘুরে অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) কেম্পা হোন্নাইয়া মঙ্গলবার বলেন, ‘গুমটি বসানোর পর থেকে একটি শিশুও উদ্ধার হয়নি। অথচ এই এক বছরে জেলায় বেশ কিছু পরিত্যক্ত শিশু উদ্ধার হয়েছে। কিছু শিশুকে হোম থেকে দত্তকও নেওয়া হয়েছে।’ তা হলে ‘পালনা’ সফল হলো না কেন? তাঁর বক্তব্য, ‘শিশু ফেলতে এসে যদি কারও নজরে পড়ে যায়, যদি সিসিটিভি-র নজরদারিতে চলে আসে — এমন নানা ভয় থেকেই মনে হয় মানুষ এই প্রকল্পে শিশুদের রাখছে না।’
জেলা প্রশাসনের আর এক আধিকারিকের কথায়, ‘এ নিয়ে প্রচারে কোনও খামতি ছিল না।’ এখন প্রশ্ন হলো, মানুষের ভয় কাটাতে কি কোনও ব্যবস্থা নেবে জেলা প্রশাসন? এর উত্তর আপাতত অধরা।