বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত এবং বর্ধিঞ্চু গ্রাম আকুই। এখানে পাঁচ বছর অন্তর সয়লা উৎসবের আয়োজন করা হয়। প্রস্তুতি শুরু হয় এক মাস আগে। এক মাস ধরে গ্রামের সমস্ত মন্দিরে গিয়ে পান-সুপুরি দিয়ে দেবদেবীকে আমন্ত্রণ জানান গ্রামবাসীরা। সয়লা উৎসবের দিন শোভাযাত্রা করে গ্রামের সমস্ত দেবদেবীকে নিয়ে যাওয়া হয় সয়লার মাঠে। সেখানে পুজোআচ্চার পর শুরু হয় বন্ধুত্ব পাতানোর উৎসব। নিজের পছন্দমতো বন্ধু খুঁজে তাঁর সঙ্গে সই পাতান গ্রামের আট থেকে আশি। ‘পছন্দের সাথী’র গলায় মালা পরিয়ে ডালা বদল করে বিশেষ লোকায়ত মন্ত্রের সাহায্যে সারা জীবন একে অপরের পাশে থাকার শপথ নেন তাঁরা। মঙ্গলবার সয়লার মাঠে আড়ম্বরের সঙ্গে পালিত হল সেই উৎসব।
দিনভর সই পাতানোর সেই উৎসব চলল আকুই গ্রামের সয়লার মাঠে। আকুই গ্রামের বাসিন্দা বর্ষা কোনার এবং রিয়াস কোনার বলেন, ‘‘এই উৎসব আমাদের এলাকার প্রতিটি গ্রামের কাছে অত্যন্ত গর্বের। আমরা এই উৎসবের জন্য পাঁচ বছর অপেক্ষা করি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এই উৎসব এলেই জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে পুরুষেরা পুরুষ বন্ধু এবং মহিলারা মহিলা বন্ধু খুঁজে সই পাতান। সেই সই সারা জীবন একে অপরের পাশে থাকার শপথ নেন। অনেকে পুরনো বন্ধুকেই সই পাতিয়ে ঝালিয়ে নেন বন্ধুত্ব।’’
স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, সয়লা উৎসবের সূচনা প্রায় দেড়শো বছর আগে। এক সময় আকুই এবং সংলগ্ন এলাকায় প্রবল ভাবে চালু ছিল জাতিভেদপ্রথা ও বর্ণবৈষম্য। ওই কারণে মাঝেমধ্যেই এলাকায় অশান্তি হত। কথিত আছে, এলাকায় রাজস্ব আদায় করতে গিয়ে তেমনই এক অশান্তি স্বচক্ষে দেখেন বর্ধমান মহারাজার এক নায়েব। তিনিই সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে সম্প্রীতি এবং শান্তি স্থাপনের জন্য খুঁজে বার করেন দাওয়াই। তাঁর উদ্যোগেই গ্রামে গ্রামে শুরু হয়েছিল এই সয়লা উৎসব। প্রথম দিকে চার থেকে ১২ বছর অন্তর এই উৎসব পালনের রেওয়াজ শুরু হয়। এখনও বন্ধুযোগ অটুট রাখছে এই উৎসব।